স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদ্রাসার পড়ুয়াদের পাহারায় দুর্গাপুজো পালিত হবে পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশে। একইসঙ্গে, পুজোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নিযুক্ত করা হবে পুজো মণ্ডপগুলিতে। বিভিন্ন শিফটে মণ্ডপ পাহারা দেবেন তাঁরাও।
তাহলে কি শেখ হাসিনার সরকার পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে দুর্গাপুজো করার মতো সুস্থ পরিবেশ নেই? একথা মানতে নারাজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, পুজো মণ্ডপগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাতে পুজোর সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও অক্ষুণ্ণ থাকে, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অস্থির আবহে দুর্গাপুজোর আয়োজন নিয়ে মঙ্গলবারই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে একটি জরুরি বৈঠক করা হয়। তাতে স্থির হয়, অর্থ সমস্যায় থাকা মন্দিরগুলির জন্য বরাদ্দের পরিমাণ এবার প্রায় দ্বিগুণ করা হবে। সেই মোতাবেক, সংশ্লিষ্ট তহবিল থেকে মন্দিরগুলিকে মোট ৪ কোটি টাকার আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছে, প্রয়োজনের তুলনায় এই বরাদ্দ সামান্য।
বিতর্ক তৈরি হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে। প্রশাসনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দুর্গাপুজোর সময় ঢাকের বাদ্যি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পুজোর দিনগুলিতে যে যে সময় মসজিদে নমাজ পড়া হবে, সেই সেই সময় ঢাক, ঢোল বাজানো যাবে না। নমাজ শেষ হলে আবার বাজনা শুরু করা যাবে। একই নিয়ম কার্যকর থাকবে মণ্ডপে মাইক বা লাউড স্পিকার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। এমনকী, তাতে একাধিক জীবনহানির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশের আশঙ্কা, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে দুর্গাপুজো চলাকালীন অশান্তি আরও বাড়তে পারে। কারণ, ইতিমধ্যেই সেদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই যে কোনও মূল্যে ভারতে পালিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা করছেন।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, শারদোৎসব যাতে নির্বিঘ্নে মেটে, তা নিশ্চিত করতে তারা বদ্ধপরিকর। সেই কারণেই পুজোর সময় প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। নজরদারিতে থাকবেন প্রচুর সংখ্যায় সাদা পোশাকের পুলিশও।
প্রসঙ্গত, হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা পৃথিবীর নজর রয়েছে বাংলাদেশের দিকে। ইতিমধ্যেই একাধিক ঘটনায় মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক উদারতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইউনুস নিজে মন্দিরে পুজো দিয়ে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, তাতে কাজের কতটা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্নের অূবকাশ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশাসনিক বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে বাংলাদেশে এবারের দুর্গাপুজো কেমন কাটে, এখন সেটাই দেখার।