একেবারে গোপনে বাংলাদেশে এসেছেন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কয়েকজন সদস্য। তবে সেই তালিকায় আইএসআই (ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিকের নাম নেই। ওই প্রতিনিধি দলের এক সদস্যের নামের সঙ্গে আইএসআই প্রধানের অনেকটা মিল আছে বলে একটি মহলে ধন্দ তৈরি হয়েছিল। যদি সেটাও ভারতের জন্য কম চিন্তার বিষয় নয়। কারণ এবারের সফরের আগে ২০০৯ সালে শেষবার বাংলাদেশে এসেছিল আইএসআইয়ের প্রতিনিধি দল (স্বীকৃতি সফর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে আইএসআইয়ের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু হাসিনার পতনের পরই মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে আইএসআইয়ের প্রতিনিধি দল যে বাংলাদেশে এসেছে, তা ঢাকা এবং ইসলামাবাদের সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
অতীতে চিনে কাজ করা ISI-র অফিসায় এসেছেন বাংলাদেশে
বিশেষত আইএসআইয়ের প্রতিনিধি দলে আছেন পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল অফ অ্যানালিসিস মেজর জেনারেল আমির আফসর। যিনি অতীতে চিনের বেজিংয়ে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসে ইসলামাবাদের সামরিক প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার একেবারে চুপিসারে আইএসআইয়ের প্রতিনিধি দল চারদিনের সফরে বাংলাদেশে গিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দুবাই হয়ে আসা এমিরেটসের একটি বিমানে করে ঢাকায় নামেন আইএসআইয়ের প্রতিনিধিরা। তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে হাজির ছিলেন বাংলাদেশের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইনটেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) এক উচ্চপদস্থ অফিসার। ঢাকায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের একাধিক সামরিক ছাউনিতে যাওয়ার কথা আছে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার ওই প্রতিনিধি দলের।
লাগাতার যোগাযোগ চলছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের
সূত্রের খবর, এমনিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক এবং সামরিক স্তরে আলোচনা চলছে। গত সপ্তাহে রাওয়ালপিন্ডিতে গিয়েছিল বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ছয়জনের প্রতিনিধি দল। পাকিস্তানি সেনা, পাকিস্তানি বায়ুসেনা এবং পাকিস্তানি নৌসেনার প্রধানদের পাশাপাশি জয়েন্ট চিফ স্টাফ কমিটি চেয়ারম্যানের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। সেইসময় পাকিস্তানের তরফে বলা হয়েছিল যে 'ওই অঞ্চলে পরিবর্তিত সুরক্ষা পরিস্থিতি' নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভারতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করত পাকিস্তান
সবমিলিয়ে ইউনুসদের আমলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘সম্পর্ক’-র ক্ষেত্রে যে ‘নবজাগরণ’ এসেছে, তা ভারতের জন্য চিন্তার বিষয়। সেইসঙ্গে অতীতে চিনে কর্মরত এক আইএসআই আধিকারিককে পাঠানোর বিষয়টাও অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
নয়াদিল্লির অফিসার মহলের বক্তব্য, নব্বইয়ের দশক এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলিকে মদত জোগানোর জন্য যেভাবে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করত আইএসআই, সেটা ভুলে যাননি কেউ। ফলে এবার পাকিস্তানের মতলবটা কী, সেটা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বিষয়টি নিয়ে ভারতের তরফে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।