আজ বেলার দিকেই বাংলাদেশের ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশবাসীর উদ্দেশে সেনা প্রধান ভাষণ দেবেন। এরপরই শুরু হয় জল্পনা। সেই জল্পনা সত্যি প্রমাণিত করে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছাড়েন। এই আবহে বাংলাদেশের সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের হিংসা ত্যাগ করতে বলেন সেনা প্রধান। ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান দাবি করেন দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আবেদন জানানো হবে। সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বিক্ষোভকারীদের হিংসা ত্যাগের আহ্বান জানান।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, 'আমরা সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলেছি। আমরা সবাইকে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরা সুতরাং একটা আলোচনা করেছি। আপনারা দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। মারামারি আমরা আর কিছু পাবো না। সুতরাং দয়া করে আমরা সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বিরত হন। প্রতিটা অন্যায়ের বিচার হবে।' এদিকে সেনা প্রধান ঘোষণা করেন, প্রয়োজন না পড়লে আর কার্ফু জারি থাকবে না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হয় হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন। সেখান থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল। তবে গত শুক্রবার থেকে ফের হিংসা ছড়ায় বাংলাদেশে। এদিকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল, রবিবার আওয়ামি লিগ, ছাত্রলিগের নেতাকর্মীদের ওপরে জায়গায় জায়গায় হামলা চালানো হয়েছিল। অন্তত ১৪টি জায়গায় মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের ওপরে হামলা হয়েছে। দেশি জুড়ে আওয়ামি লিগের অন্তত ২০টি কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৩৯টি জেলায় শাসকলদল আওয়ামি লিগ আক্রান্ত হয়েছে বিক্ষোভকারীদের হামলায়। জানা গিয়েছে, চাঁদপুরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনির বাসায়, বরিশালে জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, দিনাজপুরে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসভবনে ভাঙচুর করা হয় ও আগুন ধরিয়ে দেওয়াহ হয়। বাংলাদেশ জুড়ে আওয়মি লিগ এবং ছাত্রলিগের ১৮ জন সদস্যকে খুন করা হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষে বিরোধী দল বিএনপি-র একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবার বাংলাদেশের ১১টি জেলায় সরকারি ভবন, থানা, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশ জুড়ে অন্তত ১৪ জন পুলিশকর্মীকে পিটিয়ে খুন করেছে বিক্ষোভকারীরা। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জেই ১৩ জন পুলিশকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। একজন পুলিশকর্মীকে হত্যা করা হয় কুমিল্লায়। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁওসহ ১৫টি থানা, ১টি রেঞ্জ কার্যালয়, ৪টি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ২টি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয় বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। গতকালকের ঘটনায় পুলিশের ৩০০-র অধিক কর্মী জখম হয়েছেন।
এছাড়া গতকালকের সংঘর্ষে মৃতদের মধ্যে ৯ জন পড়ুয়া, একজন সাংবাদিকও আছেন বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় গতলাক সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রক্তাক্ত রবিবারে কমপক্ষে ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রথম আলোর রিপোর্টে। এর আগে প্রথম দফায় যে চার-পাঁচদিন বাংলাদেশে হিংসা ছড়িয়েছিল, তখন ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৩১৬।