চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিগত দিনে হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে সেনার বিরুদ্ধেও। চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনা সেই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর আগে চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালিয়ে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল সেনার বিরুদ্ধে। এহেন বাংলাদেশ সেনা এবার সে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলল। (আরও পড়ুন: জেলে ভরেই খান্ত হল না বাংলাদেশ, চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপের ঘোষণা)
সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে 'ইন্ধনদাতারা'। তবে এই 'ইন্ধনদাতা' কারা, সেই নিয়ে তিনি মুখে কুলুপ আঁটেন। তাঁর কথায়, 'ইন্ধনদাতাদের এক একেক জনের উদ্দেশ্য এক এক রকম। এর নেপথ্যে কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকতে পারে।' সেনা কর্তার অভিযোগ, অনেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ইন্ধন যোগাচ্ছেন। এরপর সেনা কর্তা আরও বলেন, 'সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে ইন্ধনে প্রভাবিত না হওয়া। অনেক সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ইন্ধনদাতার পোস্ট দেখে তা না বুঝেই অনেকে ছড়িয়ে দেন।' এরপর তিনি হুঁশিয়ারি দেন, 'সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এর আগে সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন বর্তমানে 'বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের' ব্যানারে আন্দোলন করছে। সেই জোটের মুখপাত্র করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা।
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে অভিযোগ, চিন্ময় প্রভুকে কারাগারে ওষুধ দিতে দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। ধৃত হিন্দু নেতাকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনার জেরে বাংলাদেশে সংখ্য়ালঘুদের মধ্য়ে শোরগোল পড়ে যায়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছে। এদিকে চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় নেমেছেন কয়েক হাজার হিন্দু। এরই মধ্যে প্রতিবাদী বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। এদিকে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬। সেদিন সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হন বলেও দাবি করা হয়। সেই খুনের ঘটনায় ৮ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।