২০২৪ সালের ৫ অগস্ট। উত্তাল ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশ। সরকারের নির্দেশ কার্যত অমান্য করেছে সেনা। এই আবহে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এরপর থেকেই শেখ হাসিনার সরকারে থাকা বহু মন্ত্রী ধরা পড়েছেন। আবার বহু মন্ত্রী পালিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতবাসে আছেন। তাঁদেরই একজন হলেন প্রাক্তন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। সম্প্রতি তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নাকি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আওয়ামি লিগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকের খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকাও নেই। তবে তৃণমূল স্তরে কর্মীদের মনোবল শক্ত আছে। বিদেশে আওয়ামি লিগের পক্ষে জনমত গঠনে সাহায্য করার জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে দলের নেতারা।' (আরও পড়ুন: 'আওয়ামি লিগ যদি দিল্লির কোলে বসে…', নির্বাচনে হাসিনার দলে 'না' ইউনুসের উপদেষ্টার)
আরও পড়ুন: '৩ জনের নাম যাতে সামনে না আসে…', আরজি কর মামলায় বিস্ফোরক সঞ্জয় রায়ের নয়া আইনজীবী
এদিকে মোজাম্মেল হকের আরও বক্তব্য, 'সিনিয়র নেতারা মনে করেন আমাদের সবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া উচিত। গত অগস্টে মাসে থানা থেকে লুট হওয়া হাজার হাজার ছোট অস্ত্র উদ্ধারের কোনও চেষ্টা করা হয়নি। আমাদের সন্দেহ সমুদ্রপথে আরও অস্ত্র বাংলাদেশে আসছে। পাকিস্তান যেমন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তেমনিভাবে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।' (আরও পড়ুন: এবার দূর হবে দুশ্চিন্তা, সরকারি কর্মীদের জন্যে চুপিসারে জারি হল নয়া বিজ্ঞপ্তি)
এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, আওয়ামি লিগের প্রাক্তন সাংসদ নাহিম রাজ্জাক দাবি করেছেন, আওয়ামি লিগ নেতাদের প্রায় সবার জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। বিচার ব্যবস্থায় তাঁদের কোনও অধিকার নেই। তিনি বলেন, 'আওয়ামি লিগ আলোচনায় বসতে এবং নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত, কিন্তু এর জন্য কোনো পরিবেশ নেই। যদি দেশে ফিরে নির্বাচনের দাবি জানাই, তাহলে আমাদের সবাইকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হবে।' তবে নাহিমের দাবি, দলকে পুনরায় উজ্জীবিত করতে আলোচনা চলছে জোর কদমে। তাঁর দাবি, ৩০-৪০ জন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সাসংদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপেরই এক সদ্য বাহাউদ্দিন নাসিম দাবি করেন, আত্মগোপনে থেকেও তিনি দেশের সব জেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
এর আগে শুধুমাত্র এক 'নোট ভার্বাল' দিয়ে দিল্লি কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছিল ঢাকা। তবে এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সব আনুষ্ঠানিকতা নাকি সম্পন্ন করেনি বাংলাদেশ সরকার। হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের প্রত্যর্পণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফর্মালিটি থাকে। এই নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে চিঠির প্রাপ্যতা স্বীকার করেছে নয়াদিল্লি। তবে এখনও কোনও উত্তর আসেনি। ঢাকা ভারতের প্রত্যুত্তরের অপেক্ষায় আছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ সকারের তরফ থেকে জানানো হয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। আর এরই মাঝে রিপোর্টে দাবি করা হয়, সম্প্রতি নাকি ভারতে থাকার জন্যে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে ভারত সরকার। আবার আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করেছে, শেখ হাসিনার রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ বাড়ান হয়েছে। এদিকে এরই মাঝে হাসিনাকে সরকারি ভাবে ভারতে 'রাজনৈতিক আশ্রয়' দেওয়া হবে না বলে জানা গিয়েছে। কারণ এই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই ভারতে। তবে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করে বৈধ ভাবে তাঁকে ভারতে থাকতে দিতে সম্মত মোদী সরকার। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নাকি ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিতে সবুজ সংকেত দেয়। এরপরই স্থানীয় ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের মাধ্যমে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
অপরদিকে সম্প্রতি গুম-খুনের মামলায় মুজিবকন্যার বিরুদ্ধে জারি করা হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরই মধ্যে আবার জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান বলেছিলেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে না পাঠায়, তাহলে অনুমতি সাপেক্ষে ভারতে গিয়ে তাঁকে জেরা করতেও রাজি কমিশন।