বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লিগের একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠছে নানা দুর্নীতির অভিযোগ। মামলাও হয়েছে বেশ কয়েকটি। এমনকী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ তথা সিআইডি। এই ভয়ংকর তথ্য সামনে আসতেই ঢি ঢি পড়ে গিয়েছে। কারণ এই জাহাঙ্গীর শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে তাঁর পিয়ন ছিলেন। যাঁর কাজ ছিল সুধা সদনে পানীয় জল পরিবেশন করা। পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে জাহাঙ্গীর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিতে থাকেন। এই পরিচয় ব্যবহার করে আওয়ামী লিগের পদ, চাকরি, নিয়োগ এবং বদলি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন জাহাঙ্গীর বলে অভিযোগ।
সিআইডি সূত্রে খবর, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামরুন নাহার বিপুল সম্পত্তির মালিক। তাঁর ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। ধানমন্ডিতে ২ হাজার ৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ১টি গাড়ি এবং নানা ব্যবসায় ৭৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা রয়েছে। তাঁর ব্যাঙ্কে আছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর জাহাঙ্গীরের নিজের নামে ৪ কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষিজমি রয়েছে। রাজধানীর মহম্মদপুর এবং নিউমার্কেটে দুটি দোকান আছে। মীরপুরে সাততলা ভবন এবং দুটি ফ্ল্যাট আছে। গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে চারতলা বাড়ি আছে। নোয়াখালির মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুর এলাকায় তাঁর পরিবারের একটি আটতলা বাড়িও আছে। যার ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়া দেওয়া আছে।
আরও পড়ুন: মহালয়ার সকালে ছাত্রকে পিষে দিল জেসিবি, বাঁশদ্রোণীতে মর্মান্তিক মৃত্যুতে ধুন্ধুমার
এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ যে সোজা পথে হয়নি সেটার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এই সম্পত্তি সম্পর্কে সিআইডি জানতে পেরেছে, অস্থাবর সম্পদ হিসেবে জাহাঙ্গীরের নগদ ও ব্যাঙ্কের টাকা মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ডিপিএস, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা আছে। আর তাঁর স্ত্রীর ব্যাঙ্কে ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা, ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অংশীদারি ব্যবসায় ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বিনিয়োগ করা আছে। এই জাহাঙ্গীর আলম এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক। আবার হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
এই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আবার আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সেই তথ্যও এখন এসেছে সিআইডির হাতে। যা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন বাংলাদেশ সিআইডির অফিসাররা। সিআইডি সূত্রে খবর, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লিগের সহ–সভাপতির পদ নিয়ে প্রতারণা করেন এই জাহাঙ্গীর। আর এই প্রতারণা করে তিনি ৪০০ কোটি টাকার মালিক–সহ গাড়ি–বাড়ি করে নিয়েছেন। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাও গত জুলাই মাসে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার বাসভবনে কাজ করেছে জাহাঙ্গীর। পিয়ন ছিল সে। এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। কেমন করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’