প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকার। সেই মর্মে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রকাশ করেছে সরকারের সংবিধান কমিশন। তাতে প্রস্তাব করা হয়েছে, একজন ব্যক্তি দু'বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। আর সরকারের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শনিবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এই সুপারিশ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন: জুলাই আন্দোলনে আহত পড়ুয়াদের ১০০ জনকে পুলিশের চাকরি দেবে বাংলাদেশ
প্রস্তাব অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় শুধুমাত্র সর্বোচ্চ দু'বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তার বেশি তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীকে নিরপেক্ষ রাখতে বলা হয়েছে, এই পদে থাকাকালীন তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বা সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। ১৪৪ পৃষ্ঠার এই প্রস্তাব করার জন্য সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মতামত নিয়েছে কমিশন। বলা হয়েছে, এই প্রস্তাব প্রস্তুত করার জন্য প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছেন কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি ৩২ জন গবেষক।
মূলত, অগণতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিবাদী মনোভাব রুখতেই এই প্রস্তাব। প্রস্তাবে সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৯৭২ সালে তৈরি দেশের প্রথম সংবিধানের সমালোচনা করেছে। বলা হয়েছে, দেশের প্রথম তৈরি সংবিধানের জন্যই দেশের বিভিন্ন সময়ের শাসকদের মধ্যে অগণতান্ত্রিক মনোভাব এবং ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গিয়েছে। ১৯৭২ সালের সংগঠনের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের বীজ লুকিয়ে ছিল বলে সমালোচনা করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে পরিবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, প্রথম সংবিধানে ফ্যাসিবাদী মনোভাবের সুযোগ দেওয়ায় বহু শাসকের মধ্যে অগণতান্ত্রিক মনোভাব দেখা গিয়েছে। যার ফলে দেশের বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ থাকতে পারেনি। এই বিভাগ নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করেছে। তাছাড়া, জবাবদিহীর অভাবের ফলে শাসকদের মধ্যে আর্থিক দুর্নীতি আরও বেশি দেখা গিয়েছে।
একইসঙ্গে ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল রাষ্ট্র, সমাজ এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশকে রোধ করেছে। আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ১৯৭২ সালে শুধুমাত্র এক ব্যক্তি ও একটি দলকে সামনে রেখেই সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেটা নিরপেক্ষ ছিল না বলেই অভিযোগ করা হয়েছে। যার ফলে শাসকরা বাংলাদেশজুড়ে একটি ফ্যাসিবাদী এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।