বাংলাদেশে গত পাঁচদিনে কোটা বিরোধী আন্দোলনে হিংসার জেরে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৭৪ জনের। এমনই দাবি করা হয়েছে প্রথম আলো সংবাদপত্রে। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবারও বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এদিকে গতকাল কোটা ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যত আন্দোলনকারীদের পক্ষেই ছিল। তবে এরপরও আন্দোলন ও হিংসা জারি থাকায় আপাতত কার্ফু প্রত্যাহারের পথে হাঁটছে না হাসিনা সরকার। তবে সোমবার বাংলাদেশি সময় দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে রবিবার মাত্র ২ ঘণ্টার জন্যে কার্ফু শিথিল হয়ছিল। সেই সময় আজ কিছুটা বাড়ানো হল। (আরও পড়ুন: ঢাকায় গ্রেফতার BNP মহাসচিব, থমথমে বাংলাদেশ থেকে ঘরে ফিরলেন ৪৫০০ ভারতীয় পড়ুয়া)
আরও পড়ুন: 'কমলাকে হারানো আরও সহজ হবে', ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে কটাক্ষে বিঁধলেন ট্রাম্প
অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার থেকে ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের কার্ফুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে বাকি জেলায় স্থানীয় জেলা প্রশাসন সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এর জন্যে প্রতিদিন সকাল ৮টায় বৈঠক করবেন সংশ্লিষ্ট জেলার ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আধিকারিকরা। পরিস্থিতি পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এরপর। এদিকে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি চলছে আপাতত। রবিবার এবং সোমবার বাংলাদেশের জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাকি সব সংগঠন, সংস্থা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। এই আবহে কার্ফুর মেয়াদ বাড়লে সাধারণ ছুটিও বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে এই হিংসা নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে বিরোধী বিএনপি এবং জামাতকে দোষ দেওয়া হয়েছে। সরকারের বক্তব্য, 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার চরমপন্থী সঙ্গী জামায়াত-ই-ইসলামি তাদের নিজস্ব এজেন্ডা প্রণয়নের জন্য ছাত্রদের বিক্ষোভের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে এমন একটি সম্ভাবনা সবসময়ই ছিল। বাংলাদেশে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে সেই ২০১৩ সাল থেকেই। এই আবহে এবারে তারা অহিংস ও অরাজনৈতিক কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। গত কয়েকদিনে বিরোধীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতায় পুরনো আশঙ্কাই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।' (আরও পড়ুন: ৩৪০০ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি RBI-এর, ভারতের রিজার্ভে জুড়েছে ৯.৭ বিলিয়ন ডলার)
এদিকে রবিবারই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক রায় দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ নয় বরং ৭ শতংশ সংরক্ষণ থাকবে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৫ শতাংশ, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যে ১ শতাংশ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষ ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্যে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। তবে কোটা আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক জানিয়েছেন, আন্দোলন এখনও জারি থাকবে। গত কয়েকদিনে পুলিশ এবং ব়্যাবের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এদিকে বাংলাদেশে কোটা-বিরোধী আন্দোলন নিয়ে তদন্ত করতে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে।