ফের বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দুরা। সেদেশে সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর থেকে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বেড়েছ বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। এরই মাঝে চট্টগ্রামের মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে শুক্রবার। বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রামর পাথরঘাটায় গতকাল দুপুরে ভাঙচুর করা হয় শান্তন্বেশ্বরী মাতৃমন্দিরে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেও চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বাসুদেব দত্ত মুকুন্দ দত্ত ধাম ইসকন মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছিল। তবে কোনও ক্ষেত্রেই কোনও হামলাকারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। (আরও পড়ুন: উদ্বেগে ভাসছে বাংলাদেশের ইউনুস সরকার, 'দায়িত্ববোধ' বোঝাতে বড় পদক্ষেপ ভারতের)
আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশে যা হচ্ছে...', আবেগ ভরা মন্তব্য নওশাদের, বড় পদক্ষেপ তাঁর দলের
রিপোর্ট অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টো নাগার চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটার দিক দিয়ে যাচ্ছিল কট্টরপন্থীদের একটি মিছিল। সেই মিছিল শান্তন্বেশ্বরী মাতৃমন্দিরের প্রধান ফটকের সামনে আসতেই উত্তেজনা ছড়ায়। মিছিলে থাকা কয়েকজন দুষ্কৃতী পাথর ছুড়তে শুরু করে মন্দির লক্ষ্য করে। এর জেরে মন্দিরের নীচতলায় শনি মন্দিরের সামনের কাচ ভাঙে। এরপর নাকি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় পুলিশ এবং সেনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে আরও বেশি সংখ্যক পুলিশকর্মী এবং সেনাকর্মী মোতায়েন করা হয় সেখানে। যদিও পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও কোনও দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়নি এই ঘটনায়।
এদিকে এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পটিয়া উপজেলায় ছনহারা এলাকায় বাসুদেব দত্ত মুকুন্দ দত্ত ধাম ইসকন মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় সিসিটিভি ক্যামেরার লাইন নাকি কাটা ছিল। তাই হামকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি। এদিকে এই প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইসকন পরিচালিত শ্রীশ্রী হরেকৃষ্ণ নামহট্ট সংঘেও হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, গতকাল লাঠি নিয়ে সেই মন্দিরে হামলা চালানো হয়। আসবাব ও ছবি ভাঙা হয়। এছাড়াও চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় অবস্থিত জগৎবন্ধু আশ্রম মন্দিরেও হামলার ঘটনা ঘটে কাল।
এর আগে সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন বর্তমানে 'বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের' ব্যানারে আন্দোলন করছে। সেই জোটের মুখপাত্র করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা।
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে অভিযোগ, চিন্ময় প্রভুকে কারাগারে ওষুধ দিতে দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। ধৃত হিন্দু নেতাকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনার জেরে বাংলাদেশে সংখ্য়ালঘুদের মধ্য়ে শোরগোল পড়ে যায়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছে। এদিকে চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় নেমেছেন কয়েক হাজার হিন্দু। এরই মধ্যে প্রতিবাদী বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। এদিকে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬। সেদিন সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হন বলেও দাবি করা হয়। সেই খুনের ঘটনায় ৮ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।