শেখ হাসিনার পদচ্যুতি এবং তাঁর সরকারের পতনের কি বিরাট খেসারত চোকাতে হবে তাঁরই ঘনিষ্ঠ শিল্পপতির সংস্থার হাজার হাজার নিরাপরাধ কর্মীকে? মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন কেয়ারটেকার সরকারের একটি ঘোষণায় অন্তত তেমনই আশঙ্কা করছেন পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ওই হতভাগ্য কর্মীরা।
ঘটনা ঠিক কী?
'বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড' (বেক্সিমকো) হল দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় পোশাক শিল্প নিয়ামক সংস্থা। যাদের অধীনে ১২টিরও পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে সব মিলিয়ে বেক্সিমকো-র অধীনে কাজ করেন ৪০ হাজারেরও বেশি কারিগর ও কর্মী।
এই সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এফ রহমানকে ইতিমধ্য়েই আটক করেছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। কারণ, রহমান পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। আর তারপর থেকেই বেক্সিমোর কারখানাগুলিতে সমস্ত কাজ বন্ধ।
এই অবস্থায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেছেন সংস্থার কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, মহম্মদ ইউনুসের প্রশাসনকেই এই সমস্যা মেটাতে হবে। তা না হলে কাজ হারিয়ে পথে বসতে হবে তাঁদের। দিন কাটবে অনাহারে।
কিন্তু, কেয়ারটেকার সরকার যে তেমন কিছুই করবে না, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সাফ কথা, হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই সংস্থাকে কোনও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে না। যার অর্থ - ৪০ হাজারেরও বেশি কর্মীকে পাকাপাকিভাবে নিশ্চিত রোজগার হারাতে হবে।
বৃহস্পতিবার আয়োজিত একটি সাংবাদিক বৈঠকে কেয়ারটেকার সরকারের শ্রমমন্ত্রী শেখাওয়াত হুসেন বলেন, 'আমাদের কাছে ওই সংস্থাগুলি (বেক্সিমকো-র অধীনে থাকা সংস্থাগুলি) পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কারণ, সরকারের পক্ষে সেগুলি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কর্মীরা বলছেন, ওই সংস্থাগুলির চরিত্র বদল করে রাষ্ট্রায়ত্ত করে দেওয়া হোক। কিন্তু, সেটাও সম্ভব নয়।'
এর ফলে যে ৪০ হাজারেরও বেশি কর্মীর চাকরি হারানোর ব্যবস্থা একপ্রকার পাকা করে দিল বাংলাদেশের বর্তমান কেয়ারটেকার সরকার, সেই হতভাগ্যদের উদ্দেশে শ্রমমন্ত্রীর বার্তা, তাঁরা যেন অন্য কোথাও নিজেদের জন্য বিকল্প কাজ বা রোজগারের বন্দোবস্ত করে নেন!
যদিও তারা যে এমনটা করতে নেহাতই বাধ্য হচ্ছেন, সেটাও জানিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, বেক্সিমকো-র বাকি রাখা ঋণ রয়েছে পাহাড়প্রমাণ। আর সেই কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এই সংস্থার বা সেখানকার কর্মীদের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়।
মন্ত্রীর এই দাবির স্বপক্ষে তথ্য পাওয়া গিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফেও। তাদের হিসাব অনুসারে, বেক্সিমকো-র না মেটানো ঋণের পরিমাণ ৪১০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।