আজ (১৪ মার্চ, ২০২৫) থেকেই বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সমস্ত পর্ন ওয়েবসাইট। গতকালই (বৃহস্পতিবার - ১৩ মার্চ, ২০২৫) একথা ঘোষণা করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
ওই দিন আইন মন্ত্রকের সম্মেলন কক্ষে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন আসিফ। সেই সময়েই কেয়ারটেকার সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা সর্বসমক্ষে আনেন তিনি।
বৃহস্পতিবার তিনি যে তথ্য়াবলী পেশ করেছিলেন, তাতে মূলত দু'টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। প্রথমত, গত বছরের ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে থেকে নিষিদ্ধ এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া একাধিক পর্ন ওয়েবসাইট বাংলাদেশে ফের চালু হয়ে যায়। কিন্তু, এবার সেগুলিকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ করা হবে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসন মনে করছে, দেশে ধর্ষণ-সহ নারী নির্যাতনের যেসমস্ত ঘটনা ঘটছে, তার জন্য অনেকাংশেই এই পর্ন ওয়েবসাইটগুলি দায়ী। গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে আসিফ নিজে বলেন, 'পর্নোগ্রাফির সঙ্গে ধর্ষণের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।'
বৃহস্পতিবার আসিফ যখন এই ঘোষণা করেন, তখনই জানান, নয়া সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ততক্ষণেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ - অর্থাৎ - ১৪ মার্চের মধ্য়ে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু, সত্যিই কি কেবলমাত্র পর্ন ওয়েবসাইট বন্ধ করে নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঠেকানো সম্ভব? তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, এটা ঠিক যে আপনি যা দেখছেন, তার একটা ন্যূনতম প্রভাব আপনার উপর পড়বেই। সেই যুক্তি সামনে রেখে কোনও সরকার বা প্রশাসন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।
কিন্তু, কেবলমাত্র পর্ন ওয়েবসাইট বন্ধ করে কখনও ধর্ষণ এবং শিশু ও নারী নির্যাতনের মতো সামাজিক ব্যধি পুরোপুরি রুখে দেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবথেকে যেগুলি জরুরি, তা হল শিক্ষার প্রসার ঘটানো, নারী-পুরুষের মধ্য়ে সমস্ত সামাজিক বৈষম্য ঘোচানো এবং প্রকৃত অর্থে আধুনিক মনস্কতার ব্যাপ্তি ঘটানো।
কিন্তু, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক এর উলটো। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সেখানে কট্টরপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে। যারা কার্যত বাংলাদেশের মাটিতে আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি কায়েম করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
কট্টরপন্থী মাতব্বররা প্রকাশ্যেই নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছে। লাগাতার মুক্ত ভাবনা ও মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার উপর হামলা চালানো হচ্ছে। সেসব সামলাতে ইউনুস প্রশাসন যে ব্যর্থ, তা গত কয়েক দিনের ঘটনাক্রমেই স্পষ্ট। নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক মহল সরব হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কি বাধ্য হয়েই পর্ন ওয়েবসাইটগুলি বন্ধ করে নিজেদের ঘাড় থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের মূল দায় কিছুটা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করল ইউনুস প্রশাসন?