নির্বাচন করানো নিয়ে ইতিমধ্য়েই বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মতবিরোধ সামনে এসেছে। সেই প্রেক্ষাপটে এবার কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তরুণ ব্রিগেডের সঙ্গেও মহম্মদ ইউনুস প্রশাসনের বিরোধ বাধবে?
এই প্রশ্ন ওঠার কারণ হল, রবিবার ইউনুস প্রশাসনের অন্যতম মুখ, তথা ইউনুসের প্রেস সচিব মহম্মদ শফিকুল আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই! শফিকুলের মতে, তাঁরা এই বিষয়টিকে স্রেফ একটি 'প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ' (বেসরকারি প্রচেষ্টা) হিসাবেই দেখছেন!
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এদিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত সরকারি ভবন 'যমুনা'র সামনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।
সেই সময়েই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। যার জবাবে শফিকুল বলেন, 'এটি একটি প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ। আমরা এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ হিসাবেই দেখছি। সরকারের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁরা এটিকে সাপোর্ট করছেন, আসলে একটি প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভকে সাপোর্ট করছেন!'
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ৩টের সময় তারা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।
উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরেই সংবাদমাধ্যমের সামনে এ নিয়ে মুখ খোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। এদিন দুপুরে বাংলামোটরে অবস্থিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তাঁরা। সেখানেই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার বিষয়টি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনত আবদুল্লা বলেন, 'আমরা চাই, মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করা হবে। যেখান থেকে এক দফার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকে মুজিববাদী বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচিত হবে। আমরা প্রত্যাশা রাখছি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে।'
এই প্রসঙ্গে হাসনত জানান, তাঁরা মনে করেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রটি গত ৫ আগস্টই প্রকাশ করা উচিত ছিল। তাঁর যুক্তি, তেমনটা হয়নি বলেই নাকি গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী-সহ সর্বত্র ফ্যাসিবাদের পক্ষে থাকা শক্তিগুলি ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে! দু'হাজারের বেশি শহিদ ও ২০ হাজারের বেশি আহতের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই বিপ্লবের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, 'আমরা বিপ্লবের একটিমাত্র ধাপ অতিক্রম করেছি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, এই ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারবে।'
ইতিমধ্য়েই সেই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানান সারজিস আলম। তিনি বলেন, 'এই বিপ্লবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন মত, ধর্ম ও বয়সের যে মানুষরা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এটি সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হচ্ছে।'