বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে হামলা এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদে ব্রিটিশ সংসদে সরব হলেন কনভারভেটিভ পার্টির সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। হাউজ অফ কমনসে এই নিয়ে তিনি সরকার পক্ষকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, 'এলস্ট্রিতে ভক্তিবেদান্ত ম্যানর পরিচালনা করে ইসকন। ব্রিটেনে সেটা সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দির। বাংলাদেশে এই সংগঠনের ধর্মীয় নেতা (যদিও ইসকন বাংলাদেশ স্পষ্ট করেছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বর্তমানে তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন) গ্রেফতার হয়েছেন। বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের খুন করা হচ্ছে। তাঁদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।' (আরও পড়ুন: ইসকনকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি, দাবি বাংলাদেশ সরকারের)
আরও পড়ুন: কানাডায় ভারতীয় কনস্যুলেট আধিকারিকদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে ট্রুডো সরকার
এরপর তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ করার জন্য ওদের হাইকোর্টে যে চেষ্টা করা হয়েছিল। এটা হিন্দুদের উপর সরাসরি হামলা। এটা এখন ভারতের জন্যে একটা হুমকি। এখানে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। কারণ আমরাই বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের সরকারে যে বদলই এসে থাকুক। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর এই ধরনের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।' এই আবহে সরকারের থেকে সংসদে বাংলাদেশ নিয়ে বিবৃতির দাবি করেন কনজারভেটিভ সাংসদ। তাঁর কথায়, 'বাংলাদেশে কী ঘটছে, তা গোটা বিশ্বের সামনে আসা উচিত।' এরপর এই নিয়ে সরকারের তরফ থেকে বলতে ওঠেন লুসি পাওয়েল। তিনি লেবার সাংসদ এবং হাউজ অফ কমনসের নেতা। তিনি এই নিয়ে বলেন, 'এই বিষয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশ্বজুড়ে অতি অবশ্যই ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে। এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমাদের মনোভাব সমান। আমি বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে দেখব বাংলাদেশ ইস্যুতে।' (আরও পড়ুন: নিম্ন আদালতে আপাতত চলবে না মামলা, সম্ভল নিয়ে বড় নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের)
আরও পড়ুন: CBI মামলায় জামিন সুপ্রিম কোর্টে, ২৩ মাস পর জেল থেকে ছাড়া পাবেন কুন্তল!
এর আগে সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন বর্তমানে 'বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের' ব্যানারে আন্দোলন করছে। সেই জোটের মুখপাত্র করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। (আরও পড়ুন: ইসকনের সাথে যুক্ত থাকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড পড়ুয়া!)
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে অভিযোগ, চিন্ময় প্রভুকে কারাগারে ওষুধ দিতে দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। ধৃত হিন্দু নেতাকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনার জেরে বাংলাদেশে সংখ্য়ালঘুদের মধ্য়ে শোরগোল পড়ে যায়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছে। এদিকে চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় নেমেছেন কয়েক হাজার হিন্দু। এরই মধ্যে প্রতিবাদী বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। (আরও পড়ুন: ৪ বছরে ১৯ চিঠি কেন্দ্রের, তাও এখনও অশোকনগরে তেল উত্তোলনের 'অনুমতি' দিল না বাংলা!)
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। এদিকে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬। সেদিন সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হন বলেও দাবি করা হয়। সেই খুনের ঘটনায় ৮ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।