বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিগত কয়েকদিন ধরে সেই দেশে জায়গায় জায়গায় অরাজকতা ছড়িয়েছে। হাসিনা-বিরোধিতার নামে লুটপাট, ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। শেখ হাসিনার বাবা তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ঢাকার বুকে সেই ঘটনা ঘটলেও সরকারের তরফ থেকে তা আটকানোর কোনও প্রচেষ্টা করা হয়নি। তবে এই তাণ্ডব শুরুর দু'দিন পরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস আহ্বান জানিয়েছেন যাতে শেখ হাসিনার পরিবার বা আওয়ামি লিগের নেতার বাড়িতে যাতে হামলা না চালানো হয়। তবে তাঁর কথাও শোনে কে? এই আবহে গাজিপুরে প্রাক্তন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালায় তথাকথিত 'বিপ্লবীরা'। আর সেই বিপ্লবীদের ডাকাত ভেবে স্থানীয়রা মারধর করেন। এতে জখম হয়েছেন ১৫ জন। (আরও পড়ুন: মাকে দেখতে ভিসা না পেয়ে কনস্যুলেটে 'অনুপ্রবেশ' ভারতীয়-আমেরিকান বামপন্থী নেত্রীর)
আরও পড়ুন: 'শেখ হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস করবেন না', বাংলাদেশিদের বার্তা ইউনুসের
রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজিপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালানো হয় ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই সময় মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয়, প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। এই আবহে স্থানীয় লোকজন এসে 'বিপ্লবীদের' ঘিরে ফেলেন। মোজাম্মেল হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো দুষ্কৃতীদের মারধর করা হয়। এই ঘটনায় ১৫ জন জখম হন। সেনাবাহিনী গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে সেখান থেকে। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। এদিকে পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় জয়দেবপুর থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
উল্লেখ্য, দেশজুড়ে ৬ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামি লিগ। সেদিন শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। এরপরই হাসিনা-বিরোধীরা রাস্তায় নেমে তাণ্ডব শুরু করেন। এর আগে ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। এরপর থেকেই শেখ হাসিনার সরকারে থাকা বহু মন্ত্রী ধরা পড়েছেন। আবার বহু মন্ত্রী পালিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতবাসে আছেন। তাঁদেরই একজন হলেন প্রাক্তন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। সম্প্রতি তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নাকি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আওয়ামি লিগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকের খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকাও নেই। তবে তৃণমূল স্তরে কর্মীদের মনোবল শক্ত আছে। বিদেশে আওয়ামি লিগের পক্ষে জনমত গঠনে সাহায্য করার জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে দলের নেতারা।' মোজাম্মেল হকের আরও বক্তব্য ছিল, 'সিনিয়র নেতারা মনে করেন আমাদের সবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া উচিত। গত অগস্টে মাসে থানা থেকে লুট হওয়া হাজার হাজার ছোট অস্ত্র উদ্ধারের কোনও চেষ্টা করা হয়নি। আমাদের সন্দেহ সমুদ্রপথে আরও অস্ত্র বাংলাদেশে আসছে। পাকিস্তান যেমন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তেমনিভাবে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।'