ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জড়ি বাসভবনটির অস্তিত্ব আর নেই। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সেটিকে ভাঙা শুরু করেছিল একদল তথাকথিত বিপ্লবী ছাত্র। এরপরে গোটা দেশ জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছিল হিংসার আগুন। সেই আগুন নেভাতে এবং ছাত্রদের শান্ত করতে বার্তা দিয়েছিলেন খোদ ইউনুস। তাতেও কাজ দেয়নি। তবে গাজিপুরে প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলার সময় পালটা মার খেয়েছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। আর এরপরই ইউনুস সরকারের ওপর চাপ আসতে শুরু করে। তাণ্ডব চালানো দুষ্কৃতীদের না ধরে আওয়ামি লিগের নেতা, কর্মীদের ধরতে অভিযান শুরু করা হয়। সেই অভিযানে প্রথম দিনেই হাজারের বেশি লোককে ধরেছিল যৌথ বাহিনী। আর ৪ দিনে এই অভিযানে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,২৫৮। (আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে হারাতে চাঁদা দেওয়া ইউনুস এখন মার্কিন সাহায্যের জন্যে হা-হুতাশ করছেন!)
আরও পড়ুন: 'গোটা দেশের শিল্পের ২৪ শতাংশ একসময়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গে, এখন তা...'
যে বাংলদেশে বিগত দিনে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের, সেখানেই বিরুদ্ধ রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালিয়ে। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করা হয়েছে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট'। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে তাণ্ডব চালাতে বারণ করা হলেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিংসা জারি ছিল। এরই মাঝে আবার গাজিপুরে প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা করতে গিয়ে স্থানীয়দের মারধরে জখম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা। যদিও সেই ঘটনায় 'ন্যারেটিভ' বদল করতে বদ্ধপরিকর হাসনাত-সারজিসরা। সঙ্গে সরকারও তাঁদের পথেই হাঁটছে। এই আবহে বিরোধী পক্ষকে নির্মূল করতেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে যৌথ বাহিনীর দ্বারা। ধৃতদের অধিকাংশ আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অবশ্য, বিগত কয়েকদিন ধরে যে তাণ্ডব বাংলাদেশে চলছে, তার নেপথ্যে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে যখন ৩২ নং ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা হয়, তার কিছু আগেই ছাত্র নেতা হাসনাত ফেবসুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছিলেন, 'ফ্যাসিবাদীদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে বাংলাদেশ'। এহেন উস্কানি থেকে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে ইউনুস সরকার ব্যর্থ। এমনকী বিএনপি এই পরিস্থিতির জন্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে এবং হিংসার নিন্দা জানিয়েছে। আর পরে গাজিপুরের ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধারে নেমেছে হাসনাত-সারজিসরা। এই ঘটনায় প্রতিবদ করতে তারা নিজেরাই রাস্তায় বসে পড়েছিলেন। পুলিশকে এসে তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল।
উল্লেখ্য, এর আগে মহম্মদ ইউনুসের তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে সাধারণ মানুষকে ভাঙচুর থেকে বিরত থাকতে বারণ করা হয়। এমনকী নাম নিয়ে শেখ হাসিনা বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তিতে হামলা করা থেকে বিরত থাকতে বলেন ইউনুস। তবে তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ৭ ফেব্রুয়রির গভীর রাতে গাজিপুরে আবার প্রাক্তন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হুসেনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। হামলাকারীদের পালটা মারধর করেছিলেন স্থানীয়রা। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে আহত হামলাকারীদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই 'মুখ' হাসনাত ও সারজিস আলম। তারা দাবি করেন, হামলাকারীদের আটকাতেই নাকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা সেখানে পৌঁছেছিলেন। তখন ছাত্রলিগ, যুবলিগ পালটা তাদের ওপর হামলা করেছিল। এই আবহে প্রশ্ন ওঠে, আদতে এই সব ভাঙচুরের নেপথ্যে কারা আছে? ইউনুসের সরকার কি ইচ্ছে করেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছে না? এরই মাঝে অপারেশন ডেভিল হান্টের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে তারা। তবে তাণ্ডব চালানো তথাকথিত বিপ্লবীদের বদলে আওয়ামি লিগ কর্মীদের ধরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের 'সন্তুষ্ট' করতে চাইছে ইউনুস সরকার। প্রশ্ন থাকবে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তাণ্ডব চালানো দুষ্কৃতীদের কী হবে? এরপর দু'দিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ছড়ানো দুষ্কৃতীদের কী হবে? অপারেশন ডেভিল হান্টে আওয়ামি লিগ কর্মীদের ধরে কি তবে ইউনুস সরকার দাবি করছে, তারাই এই ক'দিন হিংসা ছড়িয়েছে দেশে?