জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে জলঘোলা জারি আছে বাংলাদেশে। প্রথমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' প্রকাশ করবেন বলে দাবি করেছিলেন। সেই সময় সরকার বলেছিল, এই ঘোষণাপত্রের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে যায়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশের একদিন আগেই গভীর রাতে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র তারাই প্রকাশ করবে। এর জন্যে সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং ঐক্যমতের সঙ্গে ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরি হবে। এই সবের মাঝেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের নেতাদের দাবি ছিল, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সরকারকে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। তবে ছাত্র নেতাদের দেওয়া এই টার্গেট কি পূরণ করতে পারবে ইউনুসের সরকার? এই নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্য উপদেষ্টার প্রেস সচিব সফিকুল আলম। (আরও পড়ুন: অনৈতিক ভাবে কাটা হচ্ছিল বেতন, বাংলাদেশে হিন্দু মহিলার প্রাণ কাড়ল 'কাজের চাপ')
গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আবারও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরি করবে সরকার। তিনি বলেন, 'জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কথাবার্তা চলছে। এই নিয়ে কাজ চছে। আশা করা হচ্ছে এই নিয়ে কাজে গতি আসবে।' তবে শফিকুল আলম জানান, এই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কবে আলোচনা হবে, সেই দিনক্ষণ এখনও নির্ধারিত হয়নি। এই আবহে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই খসড়া তৈরি সম্ভব কি না। জবাবে শফিকুল আলম বলেন, 'আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।' পরে তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমাদের ঘোষণায় (৩০ ডিসেম্বর রাতে) বলেছিলাম যে কিছুদিনের মধ্যে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।' এই আবহে ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনক্ষণ নিয়ে ধোঁয়াশা জারি থাকল।
চলতি বছরে জুলাই-অগস্টে বাংলাদেশে যে হাসিনা বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, তা গণঅভ্যুত্থানের আকার নিয়েছিল। সেই 'বিপ্লব' নিয়ে অবশ্য ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সামনে এসেছে একের পর এক। প্রাথমিক ভাবে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সদস্যদের 'কোটা' দেওয়ার বিরুদ্ধে। মোট ৯ দফা দাবি সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল পড়ুয়ারা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোড় অবশ্য ঘুরে যায় জুলাইয়ের শেষের দিকে। তখন আন্দোলন শুরু হয় '১ দফার দাবিতে' - হাসিনার পদত্যাগ। ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। তবে কেন ৯ দফায় শুরু হওয়া আন্দোলন পরিণত হয়েছিল 'হাসিনা বিরোধী বিক্ষোভে'? এই নিয়ে প্রশ্নের আবহেই ৩১ ডিসেম্বর 'বিপ্লবের ঘোষণা' করার ঘোষণা করেছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারি সহ অনেক ছাত্রনেতা একযোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন এই নিয়ে। পরবর্তীতে সরকার জানিয়েছিল, এই ঘোষণাপত্রের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। এনকী বিএনপি এই ঘোষণাপত্র নিয়ে 'ধীরে চলো' নীতি গ্রহণ করেছিল। তবে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের আগের রাতেই বড় ঘোষণা করে বসে ইউনুসের সরকার। আর তাতে বদলে যায় পরিস্থিতি।