বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নিয়ে সম্প্রতি বিবৃতি দিয়েছিল ব্রিটিশ সর্বদলীয় সংসদীয় গোষ্ঠী। তাতে দাবি করা হয়েছিল, হাসিনা বিরোধী 'জুলাই বিপ্লবের' থেকেও বেশি মানুষ মারা গিয়েছে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে। এই আবহে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বাংলাদেশে নিযুক্তি ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যারা কুককে 'আমন্ত্রণ' জানিয়েছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সেই বৈঠকের পর তৌহিদ বলেন, 'ব্রিটিশ সংসদীয় গোষ্ঠী বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছিল। আমি ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে বলেছি, যেভাবে দাবি করা হয়েছে যে ৫ অগস্টের পরে মৃতের সংখ্যা বেশি, তাতে আমরা খুব আহত হয়েছি।' (আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশ ভেঙে পৃথক হিন্দুদেশ...', 'ফর্মুলা' বাতলে দিলেন প্রাক্তন সেনা কর্তা!)
আরও পড়ুন: 'তালিবানি সরকার চলছে বাংলাদেশে...', চার মাস অপেক্ষা করতে বললেন শুভেন্দু
আরও পড়ুন: '...গুজরাট ২০০২-এর মোদীকে ফেরত চাই', বাংলাদেশ নিয়ে এ কী বললেন তথাগত?
উল্লেখ্য, এর আগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদে ব্রিটিশ সংসদে সরব হয়েছিলেন কনভারভেটিভ পার্টির সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। হাউজ অফ কমনসে এই নিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'এলস্ট্রিতে ভক্তিবেদান্ত ম্যানর পরিচালনা করে ইসকন। ব্রিটেনে সেটা সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দির। বাংলাদেশে এই সংগঠনের ধর্মীয় নেতা (যদিও ইসকন বাংলাদেশ স্পষ্ট করেছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বর্তমানে তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন) গ্রেফতার হয়েছেন। বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের খুন করা হচ্ছে। তাঁদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।' এদিকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রীতি প্যাটেলও এই নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন ব্রিটিশ সংসদে। এদিকে সোমবার ব্রিটেনের হাউস অফ কমন্সের অধিবেশনে বিদেশ দফতরের মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক হামলা এবং ধর্মীয় নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। (আরও পড়ুন: 'এক মুখ্যমন্ত্রীর তো কথার ওজন থাকবে', মমতার মন্তব্য এখনও হজম হচ্ছে না ইউনুসদের)
আরও পড়ুন: 'পরিস্থিতি ভালো করতে আমাদের পাঠানো হোক বাংলাদেশে', বললেন মমতার মন্ত্রী
অপরদিকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি এবার নাগরিকদের ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে ব্রিটেন। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করে বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটেন সরকার নাগরিকদের সতর্ক করেছে। ব্রিটেনের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস মঙ্গলবার ভ্রমণ সংক্রান্ত এই পরামর্শ জারি করেছে। তাতে জনবহুল জায়গা, ধর্মীয় ভবন এবং রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে নাগরিকদের দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এফসিডিওর তরফে বলা হয়েছে, ইসলামের বিরোধী মনে করে কিছু গোষ্ঠী বেশ কিছু সম্প্রদায়ের মানুষকে টার্গেট করছে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে হামলা হয়েছে এবং পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলিতে আইইডি হামলার কথাও বলা হয়েছে। পরামর্শে নাগরিকদের আরও বলা হয়েছে, আশেপাশের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বড় বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে হবে। এফসিডিও পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ নির্দিষ্ট অঞ্চলে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। (আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে আইনজীবী খুনে গ্রেফতার আরও এক হিন্দু; কিরিচ দিয়ে কুপিয়েছিল, বলল পুলিশ)
প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। একদিন আগেই আবার সুনামগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।