বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই প্যারিস থেকে ধরে এনে মহম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা করেছিল। এবার সেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর গলাতেই শোনা গেল ইউনুস সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ। উল্লেখ্য, 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে জন আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্তি'র লক্ষ্যে সোমবার ফরিদপুরে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই বক্তৃতা রাখার সময় সিন্ডিকেট ইস্যুতে সরকারকে তোপ দাগেন হাসনাত। তিনি বলেন, 'সিন্ডিকেট বদলে এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে, এটা বলার জন্য আপনি সরকার হন নাই; বরং এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য আপনাকে বসানো হয়েছে... আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর হস্তে এই সিন্ডিকেট ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন।'
এরপর হাসনাত আরও অভিযোগ করেন, '৮ অগস্ট এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও মামলার বিচার হতে দেখা যায়নি।' তিনি বলেন, '২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে যেভাবে কারচুপি করা হয়েছে, সেগুলির এখনও পর্যন্ত কোনও বিচার হয়নি। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা যদি আমাদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চান, তাহলে অবশ্যই এই বিচারগুলি নিশ্চিত করতে হবে।'
এদিকে 'বিল্পবের ঘোষণাপত্র' নিয়ে হাসনাত সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, '১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আপনাদের রক্তের স্বীকৃতি দিক, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুনি হাসিনার বিচারের একটি স্পষ্ট বার্তা দিক, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রক্লামেশন অফ জুলাই রেভল্যুশনে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক।'
এদিকে গত পরশুই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আবারও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরি করবে সরকার। তিনি বলেছিলেন, 'জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কথাবার্তা চলছে। এই নিয়ে কাজ চছে। আশা করা হচ্ছে এই নিয়ে কাজে গতি আসবে।' তবে শফিকুল আলম জানান, এই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কবে আলোচনা হবে, সেই দিনক্ষণ এখনও নির্ধারিত হয়নি। এই আবহে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই খসড়া তৈরি সম্ভব কি না। জবাবে শফিকুল আলম বলেন, 'আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।' পরে তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমাদের ঘোষণায় (৩০ ডিসেম্বর রাতে) বলেছিলাম যে কিছুদিনের মধ্যে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।' এই আবহে ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনক্ষণ নিয়ে ধোঁয়াশা জারি আছে। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমায় অনড়।