'আমাদের সামনে এখন দুটি শত্রু। একটি হল মুজিববাদ, অপরটি হিন্দুত্ববাদ। এই দুই শক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে।' বিজয় দিবসের সমাবেশে এমনটাই বললেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের 'গণঅভ্যুত্থানের' পরেই দেখা গিয়েছিল, জায়গায় জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের জাতির পিতার ছবি সরিয়েছে তারা। ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টায় আছে ক্ষমতায় থাকা পক্ষ। এই আবহে 'মুজিববাদ' বিরোধী পটভূমি তৈরি করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে নয়া মোড় দিতে চাইছেন 'বিপ্লবীরা'। (আরও পড়ুন: আওয়ামি লিগকে 'অগণতান্ত্রিক' ভাবে মুছে ফেলতে ছক বাংলাদেশে? ভোট নিয়ে উঠছে প্রশ্ন)
আরও পড়ুন: 'এটা গুজরাট নয়...', মোদীকে আক্রমণ বাংলাদেশের সারজিস আলমের
এদিকে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছে। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এই আবহে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বহু বাংলাদেশি হিন্দু নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে বিনা ভিসাতেই ভারতে ঢুকে পড়েছেন চোড়া পথে। অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন এই আবহে। এই আবহে কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকার সময় বিএসএফের হাতে আটক হন ২ বৃদ্ধা। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৮০ ও অন্যজনের ৭২। বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে ২টি পৃথক জায়গা থেকে ২ জনকে আটক করেন বিএসএফ জওয়ানরা। তাদের কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আদালত তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাতজের নির্দেশ দেয়।
এর আগে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় চার হিন্দুকে গ্রেফতার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ধৃতদের নাম - মণিরাম বর্মণ (৫২), তাঁর স্ত্রী হীরা রানি বর্মণ (৩৫), মণিরামে প্রথম স্ত্রীর ছেলে (প্রথম স্ত্রীর) রিপন বর্মণ (২১) এবং প্রতিবেশী নিমাই চন্দ্র বর্মণ। ধৃতরা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ধোন্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঠাকুরগাওঁয়ের এক দালালচক্রের সাহায্যে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন এই চার বাংলাদেশি। সেই সময় বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের দেখে ফেলে এবং বিজিবিকে অবগত করে।
অপরদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছিলেন ১৭ বছর বয়সি এক নাবালিকা। সেই ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তর দিনাজপুরে। পুলিশের কাছে সেই তরুণী দাবি করেন, তাঁর আত্মীয়রা ভারতে থাকেন। তাঁদের কাছেই যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়, ধৃত নাবালিকা বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা। পায়ে হেঁটেই সীমান্ত পার করেছিলেন তিনি। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের ফতেহপুর আউটপোস্টের পাশ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে সেই নাবালিকা। বাংলাদেশের মৌলবাদীরা তাঁকে অপহরণ করার হুমকি দিয়েছিল। এছাড়া তাঁর পরিবারকেও খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সেই নাবালিকাকে ভারতে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল তাঁর পরিবার।