বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিদায়ের আবহে সংখ্যালঘুদের ওপর টানা অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। বহু জাগয়গায় মন্দিরে হামলা হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার হিন্দুদের বাড়িতে চড়াও হয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই আবহে সম্প্রতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তরফ থেকে দাবি করা হয়, ৪ অগস্ট থেকে বাংলাদেশে ১৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা। এর মধ্যে মামরা হয়েছে মাত্র ৬২টি ক্ষেত্রে। আর ধরা পড়েছে ৩৫ জন। এরই মাঝে বাংলাদেশের পুলিশের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপরে এই সব হামলার অধিকাংশই রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। যদিও পুলিশের সঙ্গে এই পরিসংখ্যানে আকাশ-পাতাল তফাত। (আরও পড়ুন: অমৃত ভারতের কাজ চলাকালীন রেল স্টেশনে বড়সড় বিপত্তি, ভেঙে পড়ল বিল্ডিং, আটকে বহু)
আরও পড়ুন: অসমের ৩০০ ফুট গভীর খনিতে ৬ দিনে মিলল ৪ দেহ, এখনও নিখোঁজ বাংলার সঞ্জিত সহ ৫
বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, সংখ্যালঘুদের হামলার ১২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মাত্র ২০টি সাম্প্রদায়িক। এর মধ্যে নাকি ১৬১টি হামলার অভিযোগ 'ভুয়ো'। এদিকে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার ১৪৫২টি ঘটেছে ৫ অগস্ট, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগের দিনে। এদিকে পুলিশ বলছে, সংখ্যালঘুদের হামলার ক্ষেত্রে ৫৩টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এবং এখনও পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেফতার করাহয়েছে। আর ৪ অগস্ট থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং ১০০ জনের বেশি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। (আরও পড়ুন: আরও কাছে… শীঘ্রই হবে হ্যান্ডশেক! ডকিং মিশন নিয়ে বড় আপডেট ইসরোর, দেখুন ভিডিয়ো)
আরও পড়ুন: ছিল ৫৪৪ কোটি, হল... একলাফে ১৮% বেতন বৃদ্ধি অ্যাপেল CEO টিম কুকের!
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে একাধিক হিন্দু মন্দিরে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বহু জায়গায় হিন্দুদের বাড়িতে গিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকী পুলিশ এবং সেনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল চট্টগ্রামে। এরই মাঝে গত ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সেবাশ্রম মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয় এবং লুটপাট চালানো হয়। এই ঘটনায় গাজিটেকা এলাকার বাসিন্দা হোসেন টিপুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, ১ জানুয়ারি সকাল সকাল এই হোসেন টিপু 'হরে কৃষ্ণ' নাম জপতে জপতে মন্দিরে প্রবেশ করে। পরে সেখানে এই তাণ্ডব চালায় সে।
এর আগেও গত ২১ ডিসেম্বর নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে হামলা চালিয়েছিল ডাকাতরা। সেই ঘটনায় এক সেবায়েতকে খুন করা হয় এবং লুটপাট চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। নিহত সেবায়তের নাম তরুণ চন্দ্র দাস। এর আগে ১৯ এবং ২০ ডিসেম্বর ময়মনসিংয়ের হালুয়াঘাট উপজেলায় দুটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছিল। ২০ তারিখ শাকুয়াই ইউনিয়নের বন্দেরপাড়া মন্দিরের দুটি মূর্তি ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা। এদিকে ১৯ তারিখ বিলডোরা ইউনিয়নের একটি মন্দিরে মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালুয়াঘাট থানার ওসি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি জানিয়েছেন যে সেই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলালউদ্দিন নামে এক যুবককে (২৭) গ্রেফতার করা হয়েছিল। যুবক নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন হালুয়াঘাট থানার ওসি। তারও আগে গত ১৭ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি শ্মশান কালী মন্দিরের পাঁচটি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল যে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপর ২২০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই পরিসংখ্যান অবশ্য মানতে চায়নি বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস উইংয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, অতিরঞ্জিত তথ্য পেশ করা হয়েছে। আর সংখ্য়ালঘুদের উপরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেটা মূলত রাজনৈতিক। আর তারইমধ্যে পরপর হিন্দু মন্দিরে হামলা চালানোর ঘটনা সামনে আসছে বাংলাদেশ থেকে। এই আবহে এবার পুলিশও দাবি করল, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার অধিকাংশই 'সাম্প্রদায়িক' নয়।