প্রদীপ কুমার মিত্র
সোমবার ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়েছিল নাগপুরে। তবে সেই হিংসাই একেবারে অন্যদিকে মোড় নেয় যখন স্থানীয় পুলিশ বুঝতে পারে যে সোশ্য়াল মিডিয়ায় কিছু লিঙ্ক ঘুরছে যেটা আসল উৎপত্তিস্থল হল বাংলাদেশ। নাগপুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট একটা ফেসবুক পোস্টকে চিহ্নিত করে। সেটা আসলে এক বাংলাদেশি পোস্ট করেছিল। যার জেরে শহরে আবার অস্থিরতা তৈরি হয়।
সাইবার সেল সূত্রে খবর সেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশের এক ব্যক্তির। সেই পোস্টের মাধ্য়মে দাঙ্গা যাতে ছড়িয়ে পড়ে তার উসকানি দেওয়া ছিল। সোমবারের হিংসাকে ছোট ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও বড় হিংসার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। এরপর সিকিউরিটি এজেন্সি যাচাই করে সেই ফেসবুক পোস্টটিকে ও সেটিকে ব্লক করার কথা জানায়।
লোহিত মাতানি ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ জানিয়েছে প্রাথমিকভাবে দেখা গিয়েছে এই ধরনের একটা পোস্ট মিলেছে যেটা বাংলাদেশ থেকে হয়েছিল। তবে এই পোস্ট আসলে কোথা থেকে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে পিটিআই সূত্রে খবর,নাগপুরের হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে মহারাষ্ট্র সাইবার ডিপার্টমেন্ট সাম্প্রদায়িক অশান্তি উস্কে দেওয়ার লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে আপত্তিকর বিষয়বস্তু সম্বলিত ১৪০টিরও বেশি পোস্ট এবং ভিডিও চিহ্নিত করেছে।
বুধবার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ভিডিও এবং পোস্টগুলি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স এবং ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) আইন ২০০০ এর ৭৯(৩)(বি) ধারায় নোটিশ জারি করা হয়েছে, যাতে এই ধরনের কনটেন্ট অবিলম্বে সরানোর সুবিধা হয়।
পাশাপাশি, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস)-এর ৯৪ নম্বর ধারায় নোটিস পাঠানো হয়েছে, যাতে এই অ্যাকাউন্টগুলি পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন করা হয়।
মহারাষ্ট্র সাইবার নাগপুর সিটি সাইবার পুলিশ স্টেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে, যা সোমবার ঘটে যাওয়া নাগপুর দাঙ্গা সম্পর্কিত আপত্তিকর বিষয়বস্তু প্রচারের সাথে জড়িত।
মহারাষ্ট্র সাইবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভাবাবেগে আঘাত করতে, সাম্প্রদায়িক অশান্তি উস্কে দিতে এবং রাজ্যের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও বাড়িয়ে তুলতে ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিষয়বস্তু তৈরি করা হয়েছে।
গভীরভাবে ধারণ করা বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের উপাদান জনগণকে উত্তেজিত করতে, বিভেদ সৃষ্টি করতে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ আরও গভীর করতে চায়। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল আইনি বিধানের লঙ্ঘনই নয়, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও মারাত্মক হুমকি।
অশান্তিতে সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে সাইবার বিভাগ বলেছে, এ ধরনের উস্কানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানোর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহারাষ্ট্র সাইবার বিভাগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার করে এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। অনলাইনে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে জনগণকে সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং যাচাইবিহীন বা আপত্তিকর কনটেন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বা বড় করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নাগপুর হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মাইনরিটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ফাহিম খান এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আট কর্মী-সহ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যোগেশ কদম বুধবার বলেছেন, পুলিশকর্মীদের উপর হামলা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
তিনি বলেন, সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আইনের ভয় তৈরি করা হবে।
সোমবার রাতে উত্তেজিত জনতা তাণ্ডব চালায়, গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ও পাথর নিক্ষেপ করে এবং বাড়িঘরে হামলা চালায়।
ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলায় অবস্থিত মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের সময় পবিত্র শিলালিপি সহ একটি 'চাদর' পোড়ানো হয়েছিল বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।
এফআইআরে বলা হয়েছে, হিংসার সময় কয়েকজন এক মহিলা কনস্টেবলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ।