এবার ঢাকার দক্ষিণখানের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল। আর এই ঘটনায় তেতে উঠেছে বাংলাদেশের মাটি। মা–বাবাকে কিছু কেনাকাটার কথা বলে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল ছাত্রীটি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ না ফেরায় চিন্তিত হয়ে পড়েন ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। পরে হাতিরঝিল এলাকা থেকে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে দুই যুবককে। তারা পুলিশকে জানান, হাত–পা বেঁধে পাঁচজন মিলে গণধর্ষণের পর ওই কিশোরীকে খুন করা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণখান থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। ছাত্রীর স্মার্টফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে ৩০ জানুয়ারি রবিন নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে।
পুলিশ এই রবিনকে কড়া জেরা করে রাব্বি মৃধা নামের আরও এক যুবককে গ্রেফতার করে। এই দুই যুবককে গ্রেফতার করার পর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। দু’দিন রিমান্ডে নিয়ে তাদের জেরা করার অনুমতি দেয় আদালত। এরপর রবিন ও রাব্বিকে ম্যারাথন জেরা করে পুলিশ। তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করে নেয়, পাঁচজন মিলে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আর তাতেই তার মৃত্যু হলে দেহ হাতিরঝিলে ফেলে দেওয়া হয়। হাতিরঝিল থেকে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুন করার অভিযোগে আদালত তাদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন: একসপ্তাহে একাধিক বাংলাদেশি নাগরিক–ভারতীয় দালালকে ধরল বিএসএফ, সীমান্তে অশান্তি
এই বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণখান জোন) মহম্মদ নাসিম এ গুলশান বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে তাকে মহাখালির একটা বাড়িতে ডাকা হয়। সেখানে ওই ছাত্রী যাওয়ার পর গণধর্ষণ করে হত্যা করে রবিন–সহ পাঁচজন। ধর্ষণের সময় ছাত্রীর হাত–পা বাঁধা এবং মুখে কাপড় গোঁজা ছিল। এই খুনের সঙ্গে জড়িত বাকি তিনজনকে খুঁজছে পুলিশ। এই ছাত্রীর বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী। ঢাকার দক্ষিণখানে পরিবার নিয়ে থাকেন। ছাত্রীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে সেদিন দুপুরে বেরিয়ে যায়। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেনি। তখন আমি আত্মীয়স্বজন–সহ সব জায়গায় খুঁজি। কিন্তু মেয়ের খোঁজ না পেয়ে দক্ষিণখান থানায় নিখোঁজের অভিযোগ করি।’
আরও পড়ুন: ‘জানলে খুশি হবে’, মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখলেন সাংসদ দেবকে, কোনও খুশির খবর দিলেন?
পুলিশ সূত্রে খবর, এই ছাত্রীকে খুন করার পর দেহ বস্তাবন্দি করা হয়। আর মাঝরাতেই মহাখালি থেকে রিকশায় করে দেহ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সেতুতে নিয়ে এসে দেহটি সেতু থেকে হাতিরঝিলে ফেলে দেয় রবিন। রবিন পেশায় একজন গাড়িচালক। রাব্বি মৃধার নির্দিষ্ট কোনও পেশা নেই। অভিযুক্ত অন্য তিনজন রবিনের পূর্বপরিচিত। ছাত্রীর বাবার কথায়, ‘আমার যে মেয়েটি স্কুলে যেত, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করত, আজ সে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। যারা আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার স্বপ্ন ছিল, মেয়েটি লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। আর আমি মেয়েকে কবরে শুইয়ে দিচ্ছি। প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’