বাংলাদেশে যে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং তার জেরে যে হিন্দুদের উপর হামলা নেমে এসেছে তার একটা পরিসংখ্যান এবার সামনে এল। আর সেই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহ রিপোর্ট। শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ওপার বাংলার জঙ্গিরা অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর ধর্মীয় মৌলবাদীদের অত্যাচারের মুখে পড়ছেন ওপার বাংলার সংখ্যালঘু হিন্দুরা। বাংলাদেশের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র পাঁচ মাসে পদ্মাপারে খুন করা হয়েছে ৩২ জন হিন্দুকে। ১৩ জন সংখ্যালঘু মহিলাকে ধর্ষণ এবং গণধর্ষণ করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়। ধ্বংস করা হয়েছে ১৩৩টি মন্দিরকে। আর এতকিছু ঘটে গেলেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে ইউনুস সরকারের প্রশাসন বলে অভিযোগ।
বাংলাদেশের থেকেই যে রিপোর্ট মিলেছে সেটা এনেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিল। তাঁদের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ অগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের সরকার বদলের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে এই মাটিতেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ সরকার স্বীকারও করে নেয়, তার মধ্যে ১৭৬৯টি ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে তারা। মামলাও শুরু হয়। তবে সেই মামলায় তৎপরতা দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: পরীক্ষা কেমন হচ্ছে? মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের থেকে জানলেন মমতা
ইসকন মন্দিরের চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইনজীবীদের উপর আক্রমণ করা হয়। এই বিষয়ে সংখ্যালঘু কাউন্সিলের মহাসচিব মুনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, ‘দুই ধাপে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ধাপে আছে ৪ অগস্ট থেকে ২০ অগস্ট। সরকার বদলের পর সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা। পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে। আর রিপোর্টের দ্বিতীয় ধাপে আছে, ২০ অগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর। যে সময়ে ইউনুসের উপদেষ্টা সরকার ক্ষমতায় বসে। আর সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা বেড়ে যায়। প্রথম ১৫ দিনের মধ্যেই ৯ জন সংখ্যালঘু খুন, ৪ জন ধর্ষণ এবং ৯১৫টি বাড়িতে হামলা চলে। ৯৫৩টি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। ৬৯টি মন্দির ভেঙে ফেলা হয়।’
এমনকী পরবর্তী চার মাসে দেখা যায়, ২৩ খুন, ৯ জনকে ধর্ষণ এবং ৬৪টি মন্দিরে হামলা করা হয়েছে। তার জেরে আতঙ্কে ভুগছিলেন পদ্মাপারের সংখ্যালঘুরা। এইসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে সংখ্যালঘুদের গ্রেফতার করা হয়। আর নির্যাতন করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারি চাকরিতে থাকা সংখ্যালঘুদের বলপূর্বক ইস্তফা করানো হয়। এই সব তথ্য উঠে আসে সংখ্যালঘু কমিটির রিপোর্টে। গত বুধবার রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বেলাগাম নির্যাতন শুরু হয়েছে সংখ্যালঘুদের উপর। তাদের দোকানপাঠ, পুজো করার জায়গা ভাঙচুর হয়েছে। তার প্রভাব পড়ে ঠাকুরগ্রাম, লালমোনিরহাট, দিনাজপুর, সিলেট, খুলনা এবং রংপুরে।