বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ, ২০২৫) উত্তপ্ত হয়ে উঠল পড়শি দেশের রাজধানী। দফায় দফায় চলল পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ। জবাবে ইট-পাটকেল ছুড়লেন শ্রমিকরাও। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাটানো হল কাঁদানে গ্যাসের সেল, সাউন্ড গ্রেনেড। সব শেষে নেতাদের হুঁশিয়ারি, শ্রমিকরা যদি তাঁদের বকেয়া বেতন ও বোনাস না পান, তাহলে ইদের দিনেই প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
গত বছরের অগস্ট মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের থেকেই পোশাক শিল্পের কালো দিন শুরু হয়। বহু সংস্থাতেই তালা পড়ার জোগাড় হয়। কাজ হারিয়েছেন বা নিশ্চিত হারাতে চলেছেন, এমন শ্রমিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অথচ, কিছু সময় আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের এই পোশাক শিল্পই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি ছিল।
এই প্রেক্ষাপটে পবিত্র রমজানের মাস চলে এসেছে। কিন্তু, পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের দুর্দশা ঘোচেনি। উৎসবের মাসে অন্তত যাতে বকেয়া বেতন ও বোনাস মিটিয়ে দেওয়া হয়, সেই দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পেশ করা তথ্য অনুসারে - এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন - টি এন জেড অ্যাপারেলস, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, রোর ফ্যাশন, স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস ও ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের কয়েকশো শ্রমিক। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সামনে থেকে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে টানা তিনদিন ধরে ঢাকায় শ্রম মন্ত্রকের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন পোশাক-শ্রমিকরা। গতকাল (সোমবার - ২৪ মার্চ, ২০২৫) আন্দোলনকারীরা নয়াপল্টনের সামনে পথ অবরোধ করেন। কিন্তু, আজ (মঙ্গলবার) তাঁদের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল প্রতিবাদ মিছিল।
সেই অনুসারে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকরা জমায়েত করতে শুরু করেন। এরপর ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ মিছিল শুরু হয়। শ্রমিকরা সারিবদ্ধ হয়ে সচিবালয়ের দিকে এগোতে থাকেন। ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ মিছিল তোপখানা রোডে মিছিল পৌঁছতেই পুলিশ বাধা দেয়। তার আগে অবশ্য বিজয়নগরেও মিছিল আটকানোর চেষ্টা করেছিল পুলিশ। যদিও, শ্রমিকরা সেই বাধা হটিয়ে এগিয়ে যান।
কিন্তু, তোপখানা রোডে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শ্রমিকরা ক্ষেপে যান ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের লিঙ্ক রোডের ঠিক সামনেই এই ঘটনা ঘটে। মুহূর্তে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। পুলিশের লাঠিচার্জের সঙ্গে সমান তালে আন্দোলনকারীদের ইট-পাটকেল ছোড়া চলতে থাকে। শেষমেশ অবশ্য আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
পরবর্তীতে শ্রমিক নেতারা জানান, এদিনের এই সংঘর্ষে তাঁদের অন্তত ৩০-৩৫ জন কর্মী ও সদস্য আহত হয়েছেন। আর পুলিশের তরফে দাবি করা হয়, কমপক্ষে পাঁচজন পুলিশকর্মী ইটের ঘায়ে জখম হয়েছেন।
এদিনের এই সংঘর্ষের পর শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন নিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন জানান, তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বেতন-বোনাস না পেলে ইদের দিনই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।