রেজাউল এইচ লস্কর
ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার তিস্তা নদীর অংশবিন্যাসের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। শুক্রবার থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দিনের ভারত সফরের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদের শপথ গ্রহণের সময় নয়াদিল্লিতে আমন্ত্রিত সাতটি আঞ্চলিক দেশের নেতাদের মধ্যে শেখ হাসিনাও ছিলেন এবং এক পক্ষকালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সফরের সিদ্ধান্ত ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রে জানা গেছে, জুলাইয়ে চিন সফরের আগে জুনে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এগিয়ে নিতেও আগ্রহী বাংলাদেশ। এটিকে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার ঢাকার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার ভারতের রাজধানী ঢাকায় পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। 'আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পেরে আনন্দিত। তার ভারত সফর আমাদের ঘনিষ্ঠ ও স্থায়ী সম্পর্ককে তুলে ধরে।
‘আমাদের বিশেষ অংশীদারিত্বের আরও উন্নয়নে তার দিকনির্দেশনার প্রশংসা করি,’ তিনি যোগ করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও বিশ্বস্ত প্রতিবেশী এবং শেখ হাসিনার সফর উদযাপনকৃত দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করবে।
ভারতে নতুন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকার গঠনের পর এই প্রথম কোনো বিদেশি নেতা সফরে গেলেন। শনিবার সকালে মোদিীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।
ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর একটি অংশের উন্নয়নে বাংলাদেশের পরিকল্পনার বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে কাজ বাস্তবায়নে চিনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে। প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে প্রায় ১০টি চুক্তি শনিবার স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিছু চুক্তি বিদ্যমান চুক্তির ফের নতুন করে করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং।
মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ছাড়াও শনিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।
গত এক দশক ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক ক্রমশ বাড়ছে। ভারতের 'প্রতিবেশী প্রথমে' নীতি, বিশেষ করে জ্বালানি, আর্থিক ও ভৌত যোগাযোগ জোরদারের লক্ষ্যে অনুদান ও ঋণরেখা থেকে বাংলাদেশ অন্যতম সুবিধাভোগী।
সংযোগ ক্ষেত্রে অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে ত্রিপুরায় ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু উদ্বোধন এবং চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগ চালু।
বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার, নয়াদিল্লির প্রতিশ্রুতির প্রায় এক-চতুর্থাংশ সে দেশকে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং এশিয়ায় ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার
ভারত এশিয়ায় বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, ২০২২-২৩ সালে ২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে।