করোনার কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ২১ মাস বয়স ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে৷ তাতে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) জন্য এই বিশেষ ছাড় নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ যাঁদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে, তাঁরা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে চাকরির আবেদন করতে পারবেন৷ তাঁদের বয়সসীমা এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুননির্ধারণ করা হয়েছে৷ ফলে তাঁরা ২১ মাস ছাড় পাচ্ছেন৷ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, বিসিএস ব্যতীত৷
বাংলাদেশে চাকারিপ্রার্থীদের জন্য বিসিএস সবচেয়ে আকর্ষণীয়৷ তাই বিসিএস এই সুবিধার বাইরে থাকায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন৷ তাঁদের হতাশার আরও অনেক দিক রয়েছে৷ তাঁদের কথা হল, এই ২১ মাসের সুবিধা পাবেন গড়ে দুই-তিন ভাগ, কারণ, করোনায় প্রাথমিক থেকে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ কিন্তু যাঁর চাকরির বয়স জুলাই মাসে শেষ হয়েছে, তিনি পাবেন পাঁচ মাসের সুবিধা৷ আবার যাঁর চাকরির বয়স নভেম্বরে শেষ হবে, তিনি পাবেন এক মাসের সুবিধা৷ তাই তাঁদের দাবি, এই রেয়াত না দিয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩২ করা হোক৷ এটা কেউ কেউ ৩৫ করারও দাবি করছেন৷ এই দাবি আদায়ে তাঁরা ২১ অগস্ট সংবাদ বৈঠক ও ২৭ অগস্ট শাহবাগে মহা-সমাবেশের কর্মসূচিও দিয়েছেন৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর৷
‘চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম'-এর আহ্বায়ক মানিক হোসেন রতন বলেন, ‘এই করোনায় সব শ্রেণির ছাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ সবার জীবন থেকে দুই বছর চলে গিয়েছে৷ তাঁদের সংখ্যা ৫০-৬০ লাখ৷ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যাদের বয়স ২৫ থেকে ২৭৷ কিন্তু সরকারের ঘোষিত ২১ মাসের সুবিধা পাবে শতকরা দুই-তিন ভাগ৷' তিনি বলেন, সরকারি চাকরি মোট চাকরির মাত্র ১৬ শতাংশ৷ বেসরকারি চাকরিতে এই বয়সের এই ছাড় পাওয়া যাবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়৷ আর বিসিএস বাইরে রাখা হয়েছে এই যুক্তিতে যে, করোনার মধ্যে প্রতি বছরই একটি করে বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে ২০১৯ সালের পরীক্ষা হয়েছে চলতি বছর৷ একটি বিসিএস পরীক্ষা পুরো শেষ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে তিন বছর লাগে৷
তিনি বলেন, ‘এই করোনার সময় সাড়ে চার লাখের মতো চাকরিপ্রার্থী তাদের বয়স হারিয়েছেন৷ তাঁদের ১৫-১৬ ভাগেরও বেশি ২১ মাসের সুবিধা পাবেন না৷ তাঁরাই পুরো সুবিধা পাবেন, যাঁদের বয়স ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ৩০ বছর পার হয়েছে৷ তাই চাকরির বয়স বাড়িয়ে ৩২ বছর করার কোনও বিকল্প নেই৷' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে মাস্টার্স করা অক্ষয় কুমার রায় বলেন, ‘আমার ৩০ বছর হবে সেপ্টেম্বর মাসে৷ তাই আমি ২১ মাস নয়, তিন মাসের সুবিধা পাবে৷ কিন্তু সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে যদি ৩২ করা হয়, তাহলে সবাই সমান সুবিধা পেতেন৷ সরকারের এই সিদ্ধান্তে তাই অধিকাংশই লাভবান হবেন না৷'
তিনি বলেন, ‘করোনার সময় শতকরা ১৪ ভাগের মতো চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে৷ সেখানেও আমরা বঞ্চিত হয়েছি৷' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘২১ মাস নয়, সরকারের উচিত করোনা যতদিন থাকবে, ততদিন বয়সের একটা রেয়াত দেওয়া৷ তার জন্য একটি পদ্ধতি বের করা দরকার৷ আর বেসরকারি চাকরিতে ৩০ বছর বয়স সীমা নির্ধারিত না থাকলেও যাঁরা এটা ফলো করেন, তাঁদের জন্যও একই ধরনের নির্দেশনা প্রয়োজন৷ করোনার মধ্যে প্রতি বছর একটি বিসিএস হয়েছে৷ তারপরও একই বয়স-সুবিধা সেখানেও থাকা উচিত৷'
এ প্রসঙ্গে পিএসসির সদস্য শাহজাহান আলি মোল্লা বলেন, ‘এবছর নয়, আগামী বছর বিসিএস-এ বয়সের সুবিধা পাবেন৷ আমরা এ বছর তো আগেই নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার দিয়ে ফেলেছি, তাই এই বয়স রেয়াতের সুবিধা দেওয়া হয়নি৷ এ বছর একটি সার্কুলার তো হয়েছে৷ বছরের শেষের দিকে আরেকটি হবে, তখন আশা করছি করোনার কারণে বয়সের সুবিধা দেওয়া হবে৷ হয়ত সুবিধা পাবে৷ আমাদের কাছে সরকারের চিঠিটি এখনো আসেনি৷ আসার পর দেখবে, কী করা যায়৷'