অগস্টের পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই সংক্রান্ত নানান রিপোর্ট সামনে এসেছে। অবশ্য বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে আরও বেশি করে সংখ্যালঘু অত্যাচারের অভিযোগ সামনে এসেছে বাংলাদেশের থেকে। তবে মহম্মদ ইউনুস সরকারের তা নিয়ে হেলদোল নেই। বরং তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতন নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের সংখ্যালঘুবিষয়ক ফোরামের ১৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সম্প্রীতির গৌরবজনক উদাহরণ তৈরি করেছে। এদিকে সেই সম্মেলনেই একাধিক এনজিও প্রতিনিধি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে দাবি করেন। সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির বিষয়টিও উত্থাপিত করা হয়েছিল সেখানে। (আরও পড়ুন: নবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ, বাংলাদেশে গ্রেফতার হিন্দু নাবালক)
আরও পড়ুন: চিন্ময় প্রভুকে প্রসাদ দিতে গিয়ে আটক ২ সন্ন্যাসী, পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
তবে সেই অধিবেশনে উপস্থিত বাংলাদেশি প্রতিনিধি বলেন, 'সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কিছু ষড়যন্ত্রকারী মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। বিদেশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সরকার। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির বিষয়টি ভুলভাবে উত্থাপিত করা হয়েছে এখানে। তাঁকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আবহে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে।' তবে বাংলাদেশ সরকার নিজের দেশে নিজদের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। সেখানে গতকালও ৪টি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠছে সেনার দিকেও। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অন্তত ৪ মন্দিরে হামলা, দুষ্কৃতীদের ধরার বেলায় '০' ইউনুসের পুলিশ)
আরও পড়ুন: উদ্বেগে ভাসছে বাংলাদেশের ইউনুস সরকার, 'দায়িত্ববোধ' বোঝাতে বড় পদক্ষেপ ভারতের
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে হামলা এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদে ব্রিটিশ সংসদে সরব হন কনভারভেটিভ পার্টির সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। হাউজ অফ কমনসে এই নিয়ে তিনি সরকার পক্ষকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, 'এলস্ট্রিতে ভক্তিবেদান্ত ম্যানর পরিচালনা করে ইসকন। ব্রিটেনে সেটা সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দির। বাংলাদেশে এই সংগঠনের ধর্মীয় নেতা (যদিও ইসকন বাংলাদেশ স্পষ্ট করেছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বর্তমানে তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন) গ্রেফতার হয়েছেন। বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের খুন করা হচ্ছে। তাঁদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ করার জন্য ওদের হাইকোর্টে যে চেষ্টা করা হয়েছিল। এটা হিন্দুদের উপর সরাসরি হামলা। এটা এখন ভারতের জন্যে একটা হুমকি। এখানে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। কারণ আমরাই বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের সরকারে যে বদলই এসে থাকুক। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর এই ধরনের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।' এর আগে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলে ডোনাল্ড ট্রাম্পও। (আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশে যা হচ্ছে...', আবেগ ভরা মন্তব্য নওশাদের, বড় পদক্ষেপ তাঁর দলের)
এদিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে এপার বাংলাতেও। কলকাতা বাংলাদেশি ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে পরপর বেশ কয়েকদিন। এই আবহে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়, বিক্ষোভে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানো ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে ঢাকা। 'মনে হচ্ছে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ডেপুটি হাইকমিশনের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে তার জন্য সমস্ত রকমের পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকাকে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। বাংলাদেশে সরকার সমস্ত রকমের হিংসার বিরোধী। কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের ও ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের বাকি কূটনৈতিক অবস্থানগুলিতে যাতে কূটনীতিবিদরা সুরক্ষিত থাকেন, তা নিশ্চিত করার জন্যে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।'