বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল পরিস্থিতি। এই সময়ে ভয়েস অফ আমেরিকা এক সমীক্ষা প্রকাশ করে দাবি করল, হাসিনা জমানা থেকে নাকি এখন বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা। (আরও পড়ুন: 'বাড়াবাড়ি হচ্ছে… ইউনুস ভালো বলেছেন', চিন্ময় প্রভু নিয়ে বিস্ফোরক মমতার মন্ত্রী)
আরও পড়ুন: ইসকন ও চিন্ময় প্রভু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ব্রিটিশ সংসদে, তোপ ইউনুস সরকারকে
বাংলদেশি সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সমীক্ষা গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পরিচালিত হয়েছিল। তাতে উত্তরদাতা ছিলেন মাত্র ১০০০ জন বাংলাদেশি। আর সেই উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ ছিলেন মুসলিম। সেই সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ৬৪.১ শতাংশ মানুষ মনে করেছিলেন যে হাসিনা জমানা থেকে ইউনুসের সময়ে বেশি নিরাপত্তা পাওয়া যাচ্ছে। আর ১৫.৩ শতাংশ মনে করেছিলেন, নিরাপত্তার দিক থেকে হাসিনা জমানাই ভালো ছিল। আর ১৭.৯ শতাংশ মানুষ মনে করেছিলেন, হাসিনা জমানার থেকে কোনও উন্নতি ঘটেনি ইউনুস জমানায়। (আরও পড়ুন: ইসকনের সাথে যুক্ত থাকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড পড়ুয়া!)
আরও পড়ুন: নিম্ন আদালতে আপাতত চলবে না মামলা, সম্ভল নিয়ে বড় নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন বর্তমানে 'বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের' ব্যানারে আন্দোলন করছে। সেই জোটের মুখপাত্র করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। (আরও পড়ুন: কানাডায় ভারতীয় কনস্যুলেট আধিকারিকদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে ট্রুডো সরকার)
আরও পড়ুন: ইসকনকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি, দাবি বাংলাদেশ সরকারের
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে অভিযোগ, চিন্ময় প্রভুকে কারাগারে ওষুধ দিতে দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। ধৃত হিন্দু নেতাকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনার জেরে বাংলাদেশে সংখ্য়ালঘুদের মধ্য়ে শোরগোল পড়ে যায়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছে। এদিকে চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় নেমেছেন কয়েক হাজার হিন্দু। এরই মধ্যে প্রতিবাদী বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশ নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে নোটিশ সৌগত রায়ের, 'অসন্তুষ্ট' মমতা: রিপোর্ট)
আরও পড়ুন: 'ভাসুর মনে হয়…', বাংলদেশ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের তোপ বামেদের,'কিউট' বললেন BJP নেতা
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। এদিকে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬। সেদিন সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হন বলেও দাবি করা হয়। সেই খুনের ঘটনায় ৮ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।