কট্টর মৌলবাদী সংগঠনের প্রায় ১০০ জন সদস্য রবিবার বাংলাদেশে একাধিক মন্দিরে আক্রমণ করল। এখানেই তারা থেমে থাকেনি, বরং হামলা চালানো হয় ট্রেনেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথমে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে ভাঙচুর চালানো হয়। তারপর রেললাইনের নাট–বল্টু খুলে নেওয়া হয়। এমনকী লাইনের ওপর কংক্রিটের স্ল্যাবও ফেলে রেখেছে হরতালকারীরা। আশুগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঝখানে ১৮ নম্বর রেল সেতুতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বেলার দিকে আশুগঞ্জ রেলস্টেশনে হরতালকারীরা জড়ো হয়। এই গণ্ডগোলের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালির পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশ জুড়ে এই গণ্ডগোল, হিংসা শুরু হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে দু’দিনের সফরে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে পদ্মাপারে। এমনকী পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে ১০ জন প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর পর ক্ষেপে উঠেছে মৌলবাদী সংগঠন। তারা পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে সামিল হওয়ার পাশাপাশি পথ অবরোধ করতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকায় এসেছিলেন। শনিবার বিপুল পরিমাণ করোনা ভ্যাকসিন তুলে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করার পর চরম হিংসার রাস্তা বেছে নেয় মৌলবাদী সংগঠনগুলি। শুক্রবারই ঢাকায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। রাস্তায় নেমে তারা প্রবল প্রতিবাদে গর্জে উঠলে পুলিশকে রবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস চালাতে হয়। শনিবার চট্টগ্রাম ও ঢাকায় হাজারের বেশি মৌলবাদী সদস্যরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়। আর রবিবার মৌলবাদী সংগঠন হেফাজত–ই–ইসলাম ট্রেনের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনেন। তার জেরে ১০ জন আহত হয়েছেন।
রেল সূত্রে খবর, এই হিংসার ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামমুখী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে আছে নরসিংদীর আমিরগঞ্জে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পথে যাওয়া তিতাস কমিউটার ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে নরসিংদীর ঝিনারদিতে। নোয়াখালি থেকে ঢাকার পথে আসা উপকূল এক্সপ্রেস আটকে রয়েছে আখাউড়ায়। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বসে আছে। সিলেট থেকে ঢাকামুখী কালনী এক্সপ্রেস বসে আছে হবিগঞ্জের আজমপুরে। চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহের পথে চলাচলকারী বিজয় এক্সপ্রেস কুমিল্লায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জ্বলছে। বিভিন্ন সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এমনকী প্রেস ক্লাবে আক্রমণ নামিযে আনা হয়েছে। এই আক্রমণ নেমে এসেছে প্রেস ক্লাবে সভাপতির উপরও। রাজশাহীতে দুটি বাসে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদীরা নারায়নগড়ে পুলিশের উপর পাথর পর্যন্ত ছুঁড়েছে। বালির বস্তা দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে দিয়েছে। ফলে পুলিশকে রবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস চালাতে বাধ্য হতে হয়েছে। মোদী সফরের প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে হরতালের ডাক দিয়েছিল এই মৌলবাদী সংগঠন হেফাজত–ই–ইসলাম। তার ফলেই এই হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের ভাইদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।’