বাংলাদেশকে মার্কিন অনুদান দেওয়া বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন। ২৬ জানুয়ারি জানা যায়, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা USAID বাংলাদেশে তাদের সব প্রকল্পের কাজ বন্ধের জন্যে নির্দেশিকা জারি করেছে। এই মর্মে বিভিন্ন প্রকল্পের পার্টনারদের কাছে নাকি USAID-এর তরফ থেকে চিঠি গিয়েছে। তবে এই আবহেও ট্রম্পের বিরুদ্ধে কিছু না বলে তাঁর মন জয়ের চেষ্টায় ঢাকা। এই নিয়ে ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সেখানেই তিনি বলেন, মার্কিন অনুদানে চলা প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিতের নির্দেশ দিলেও বাংলাদেশের ওপর তার বড় প্রভাব পড়বে না। বরং রোহিঙ্গাদের জন্যে মার্কিন সাহায্য জারি রাখায় ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইউনুসের সরকার। এদিকে এক বিবৃতি জারি করে ট্রাম্পের প্রশাসনকে এই ইস্যুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউনুসও। (আরও পড়ুন: সনাতন হল ভারতের 'জাতীয় ধর্ম', ঐক্যের বার্তা দিতে মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথের)
আরও পড়ুন: 'কয়েকটা ড্রোন ছেড়ে দিলেই...', বাংলাদেশকে 'মশা-মাছি' বলে আক্রমণ শুভেন্দুর
উল্লেখ্য, এর আগে ইজরায়েল এবং মিশর ছাড়া বাকি সব আন্তর্জাতিক অনুদান বন্ধের জন্যে নির্বাহী নির্দেশিকায় সই করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই দুই দেশকে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য এবং সামরিক সাহায্য পাঠিয়ে থাকে আমেরিকা। এদিকে ট্রাম্প ইউক্রেনকে পাঠানো মার্কিন সাহায্যও স্থগিত করেছে আপাতত। রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি অভ্যন্তরীণ মেমোর মাধ্যমে সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও বলেন, 'প্রতিটি প্রস্তাবিত নতুন অনুদান আপাতত স্থগিত থাকবে। যতক্ষণ না এই সব অনুদানের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে তা অনুমোদিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন করে কোনও অনুদান দেওয়া হবে না বা কোনও অনুদানের মেয়াদ বাড়ানো হবে না।' উল্লেখ্য, এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির উল্লেখ করেছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে সওয়াল করেছিলেন এবং বিদেশি সহায়তা সীমিত করার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। এই আবহে ট্রাম্পের সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বিদেশি অনুদান বন্ধের এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে স্টেটডিপার্টমেন্টের তরফ থেকে। (আরও পড়ুন: এতদিন পরও জারি ধরপাকড়, চট্টগ্রামে গ্রেফতার চিন্ময় প্রভুর আরও ১১ 'অনুগামী')
আরও পড়ুন: 'ভারতীয় আগ্রাসন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও...', ইস্যু এক, স্লোগান আরেক!
এদিকে ইউক্রেনের ওপরে রাশিয়ার হামলার পর থেকেই আমেরিকা কয়েক বিলিয়ন ডলারের সাহায্য করেছে ইউক্রেনকে। মার্কিন সাহায্যের ওপর ভর করেই রাশিয়াকে এতদিন ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে ইউক্রেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নয়া সিদ্ধান্তে ইউরোপের এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নেয়, সে দিকে নজর থাকবে সকলের। এদিকে শুধু ইউক্রেন নয়, আমেরিকা এতদিন ধরে এইচআইভি এইডস প্রতিরোধ প্রকল্প - PEPFAR -এ বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য পাঠিয়ে থাকত। এর সুফল পেত মূলত আফ্রিকার দেশগুলি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নয়া পদক্ষেপের জেরে সেই প্রকল্প ধাক্কা খেতে চলেছে। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে এক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট, জর্জ ডাব্লু বুশের আমলেই শুরু হয়েছিল এইচআইভি প্রতিরোধক এই প্রকল্প। এত বছরে এই প্রকল্পের ফলে প্রাণ বেঁচেছে ২৬ মিলিয়ন মানুষের। (আরও পড়ুন: খুলনায় হিন্দু পড়ুয়াকে খুনের ঘটনায় 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' গ্রেফতার, ক্রমে বাড়ছে রহস্য)
এদিকে মহম্মদ ইউনুস 'ট্রাম্প বিরোধী' হিসেবেই পরিচিত। মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ে তিনি অস্বস্তিতে আছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মদম্মদ ইউনুসের সঙ্গে মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের সুসম্পর্কের কথা অনেকেই জানেন। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প জেতার পরে প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে ইউনুস বলেছিলেন, 'ট্রাম্পের এই জয় সূর্য গ্রহণের মতো। কালো দিন আসছে। তা যেন আমাদের গ্রাস না করে, আত্মশক্তিকে দুর্বল না করে দেয়।' আর পরে যখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিল, তখন নাকি ইউনুসের নাম না নিয়েই ট্রাম্প বলেছিলেন, 'ঢাকার মাইক্রোফাইন্যান্সের সেই ব্যক্তি কোথায়? শুনেছি, তিনি আমাকে হারাতে চাঁদা দিয়েছিলেন।' উল্লেখ্য, সেবার ট্রাম্প হারিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে। আর ক্লিনটন পরিবারের সঙ্গে ইউনুসের ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে মার্কিন সফরে গিয়েও বিল ক্লিনটনের ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ইউনুস। সেখানে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের 'মাথা'কে চিনিয়ে দিয়েছিলেন ইউনুস। এই সবের মাঝে বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কি হয়, সেদিকে নজর সবার।