আগামী নির্বাচনে আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, এই নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি বাংলাদেশে। সেই দেশের প্রধান নির্বাচনী আধিকারিক থেকে সরকারের আইন উপদেষ্টা কিংবা ইউনুসের প্রেস সচিবও এই ইস্যুটি সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন আপাতত। তবে এরই মধ্যে কোনও রাগঢাক না করেই ইউনুসের 'ডান হাত' মাহফুজ আলম দাবি করলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামি লিগকে লড়াই করতে দেওয়া হবে না। তাঁর কথায়, 'আগামী নির্বাচনে লড়বে শুধুমাত্র বাংলাদেশপন্থী দলগুলি।'
মাহফুজের কথায়, 'আমরা কোনও রাষ্ট্রের মদদে হাসিনাকে উৎখাত করিনি। আমরা ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে হাসিনাকে উৎখাত করেছি। আমাদের কারও তাঁবেদারি করার আর দরকার নেই। হাসিনার তাঁবেদারি করার যে প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দিয়েছি আমরা। নিজেদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছি। আমরা কারো কাছে আর মাথা নত করব না। তাই আসুন বাংলাদেশপন্থার মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিরা ঐক্যবদ্ধ হই। সংস্কারগুলো করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করুন।'
মাহফুজ বলেন, 'আওয়ামি লিগ আবারও যদি দিল্লির কোলে আশ্রয় নিয়ে আমাদের দিকে চোখ রাঙাতে চায়, আমরা বসে থাকব না। আমরা শহিদদের পথ অনুসরণ করব। আমরা শহিদ হব। আমরা আবার লড়াই করব। আমরা শুধু আওয়ামি লিগের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা উৎখাত করে সন্তুষ্ট নই, বরং আওয়ামি লিগের ফ্যাসিজমের যত বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রান্তে, প্রশাসনে, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়ে গিয়েছে, তাদেরও আমরা বিচারের আওতায় আনব।'
তিনি আরও বলেন, 'অনেকগুলো কমিশন সংস্কারের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে। খুব শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কার না করলেই নয়, নির্বাচনের আগে সেসব সংস্কার করতে চাই। এই সংস্কারগুলো মুখের বুলি নয়। শেখ হাসিনা যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছেন, যে প্রতিষ্ঠানগুলো হাসিনাকে টিকিয়ে রেখেছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই রকম রেখে আমরা নির্বাচন করতে পারি না। নির্বাচন করার আগে অবশ্যই হাসিনার ওই প্রতিষ্ঠান ও দালালদের উৎখাত করে এবং খুনিদের বিচার করে নির্বাচনের দিকে এগোতে চাই।'
শুধুমাত্র এক 'নোট ভার্বাল' দিয়ে দিল্লি কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছিল ঢাকা। তবে এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সব আনুষ্ঠানিকতা নাকি সম্পন্ন করেনি বাংলাদেশ সরকার। হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের প্রত্যর্পণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফর্মালিটি থাকে। এই নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে চিঠির প্রাপ্যতা স্বীকার করেছে নয়াদিল্লি। তবে এখনও কোনও উত্তর আসেনি। ঢাকা ভারতের প্রত্যুত্তরের অপেক্ষায় আছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ সকারের তরফ থেকে জানানো হয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। আর এরই মাঝে রিপোর্টে দাবি করা হয়, সম্প্রতি নাকি ভারতে থাকার জন্যে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে ভারত সরকার। আবার আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করেছে, শেখ হাসিনার রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ বাড়ান হয়েছে। এদিকে এরই মাঝে হাসিনাকে সরকারি ভাবে ভারতে 'রাজনৈতিক আশ্রয়' দেওয়া হবে না বলে জানা গিয়েছে। কারণ এই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই ভারতে। তবে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করে বৈধ ভাবে তাঁকে ভারতে থাকতে দিতে সম্মত মোদী সরকার। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নাকি ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিতে সবুজ সংকেত দেয়। এরপরই স্থানীয় ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের মাধ্যমে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
অপরদিকে সম্প্রতি গুম-খুনের মামলায় মুজিবকন্যার বিরুদ্ধে জারি করা হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরই মধ্যে আবার জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান বলেছিলেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে না পাঠায়, তাহলে অনুমতি সাপেক্ষে ভারতে গিয়ে তাঁকে জেরা করতেও রাজি কমিশন।