দু'দিন আগেই গত শনিবার বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনও প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। এরপর রবিবার বাংলাদেশ জুড়ে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০০ জনের। এই পরিস্থিতিতে আবার বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভুইঞাঁ বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানান। তিনি সো প্রত্যাহারের দাবি করেন এবং আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়ার আর্জা জানান সরকারের কাছে। এই সবের মঝেই আবার আজ বাংলাদেশি সময় দুপুর ৩টে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। জানা গিয়েছে, জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে সেনা সদর দফতরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান। সেখানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ক অধ্যাপক। (আরও পড়ুন: হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশে ভাঙা হল বঙ্গবন্ধুর মূর্তি, ভাইরাল ভিডিয়ো)
আরও পড়ুন: ছাত্র বিক্ষোভের মাঝে বাংলাদেশে সরকার গঠনের প্রস্তাব শিক্ষকদের, কী করবেন হাসিনা?
আরও পড়ুন: পাক হাইকমিশনের মদতে জামাত হিংসা ছড়াচ্ছে, জানাল হাসিনা সরকার, সতর্ক ভারত
এদিকে এর আগে বাংলাদেশি সেনা প্রধান জওয়ানদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে আন্দোলনকারীদের ওপরে গুলি না চালানো হয়। এই পরিস্থিতিতে আজ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কার্ফু উপেক্ষা করে মানুষজন রাস্তায় নেমেছেন। রাস্তায় সেনা মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। তবে সেনার দেওয়া ব্যারিকেড সরিয়ে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যান। সেই ক্ষেত্রে সেনা কর্মীদের বাধা সৃষ্টি করতে দেখা যায়নি সেভাবে। এই পরিস্থিতিতে এবার চরম জল্পনা তৈরি হয়েছে সেনা প্রধানের ভাষণ নিয়ে। (আরও পড়ুন: পদত্যাগের কথা আদানির মুখে, আম্বানিদের মতো ভাগাভাগি হবে সাম্রাজ্যের?)
আরও পড়ুন: ২৩০০ পয়েন্ট ধস সেনসেক্সে, দালাল স্ট্রিটের ভূমিকম্পে পতন কোন সব শেয়ারের দামে?
এদিকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল, রবিবার আওয়ামি লিগ, ছাত্রলিগের নেতাকর্মীদের ওপরে জায়গায় জায়গায় হামলা চালানো হয়েছিল। অন্তত ১৪টি জায়গায় মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের ওপরে হামলা হয়েছে। দেশি জুড়ে আওয়ামি লিগের অন্তত ২০টি কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৩৯টি জেলায় শাসকলদল আওয়ামি লিগ আক্রান্ত হয়েছে বিক্ষোভকারীদের হামলায়। জানা গিয়েছে, চাঁদপুরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনির বাসায়, বরিশালে জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, দিনাজপুরে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসভবনে ভাঙচুর করা হয় ও আগুন ধরিয়ে দেওয়াহ হয়। বাংলাদেশ জুড়ে আওয়মি লিগ এবং ছাত্রলিগের ১৮ জন সদস্যকে খুন করা হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষে বিরোধী দল বিএনপি-র একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবার বাংলাদেশের ১১টি জেলায় সরকারি ভবন, থানা, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশ জুড়ে অন্তত ১৪ জন পুলিশকর্মীকে পিটিয়ে খুন করেছে বিক্ষোভকারীরা। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জেই ১৩ জন পুলিশকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। একজন পুলিশকর্মীকে হত্যা করা হয় কুমিল্লায়। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁওসহ ১৫টি থানা, ১টি রেঞ্জ কার্যালয়, ৪টি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ২টি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয় বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। গতকালকের ঘটনায় পুলিশের ৩০০-র অধিক কর্মী জখম হয়েছেন।
এছাড়া গতকালকের সংঘর্ষে মৃতদের মধ্যে ৯ জন পড়ুয়া, একজন সাংবাদিকও আছেন বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় গতলাক সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রক্তাক্ত রবিবারে কমপক্ষে ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রথম আলোর রিপোর্টে। এর আগে প্রথম দফায় যে চার-পাঁচদিন বাংলাদেশে হিংসা ছড়িয়েছিল, তখন ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৩১৬।