বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ভেক ধরে টানা প্রায় ১০ বছর ভারতে গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হল। শনিবার এই ঘটনা ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায় বিহারের গয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ইটিভি ভারতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ধৃত ওই যুবকের নাম বাবু জো বড়ুয়া ওরফে রাজীব দত্ত।
গোটা ঘটনায় রীতিমতো হতবাক পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এত বছর ধরে নিজের আসল পরিচয় গোপন করে বুদ্ধ গয়ায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন ওই বাংলাদেশি। শুধু তাই নয়, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে রীতিমতো বহাল তবিয়তেই জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। অত্যন্ত চতুরভাবে ফাঁকি দিয়েছিলেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে।
শনিবার ভারত থেকে থাইল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল রাজীবের। কিন্তু, বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরেই তাঁকে পাকড়াও করা হয়। সূত্রের দাবি, ওই যুবকের কথায় একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং হাজতে পাঠায়।
পুলিশের দাবি, শনিবার রাজীব গয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছতেই তাঁকে দেখে সন্দেহ হয় কর্তব্যরত অভিবাসন আধিকারিকদের। তাঁরা দেখেন, ওই তরুণ সন্ন্যাসীর কাছে ভারতের পাসপোর্ট রয়েছে। কিন্তু, তারপরও তাঁর আচরণ সুবিধানজক মনে হয়নি আধিকারিকদের।
এরপর রাজীবকে বিমানবন্দরেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পরই ভেঙে পড়েন তিনি। স্বীকার করেন, তিনি আদতে ভারতীয় নন, বাংলাদেশি। বেআইনিভাবে ভারতে বসবাস করছেন।
তবে, শুধুমাত্র ভারতীয় হিসাবে নয়, ধৃত রাজীবের নাকি আরও অনেক পরিচয় রয়েছে! প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই তিনি স্বীকার করেন, তাঁর কাছে আরও পাসপোর্ট রয়েছে। সেগুলিতে তাঁর পরিচয় আলাদা আলাদা। নিরাপত্তা আধিকারিকরা অভিযুক্তকে তল্লাশি করে সেই সমস্ত পাসপোর্ট উদ্ধার করেন।
এছাড়াও, রাজীবের কাছ থেকে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ আধার কার্ড ও প্যান কার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেইসঙ্গে, তাঁর কাছ থেকে ভারত ও থাইল্যান্ডের মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ইউরো এবং মার্কিন ডলার!
এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন গয়ার সিনিয়র সুপারিনটেন্ডেন্ট অফ পুলিশ আশিস ভারতী। ইটিভি ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ধৃত ব্যাক্তি আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। সেই পরিচয় গোপন করে গত ১০ বছর ধরে তিনি ভারতে বসবাস করছিলেন। তাঁর কাছে ভারতে থাকার ভিসা ছিল না। বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্টও ছিল না।
সেইসঙ্গে আশিস সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'ওই ব্যক্তি ভারত ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালানোর ছক কষেছিলেন। সেই কারণে তিনি গয়া বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে একাধিক ভুয়ো ও জাল নথি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা তাঁকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠিয়েছি।'