হাসিনা সরকারের আমলে হাসিনা সরকারেরই সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। অভিযোগ, শুধুমাত্র এই কারণেই তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল! ২০১৯ সালের সেই ঘটনায় অভিযুক্ত মোট ২৫ জনকে আগেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার শাসনকালেই ওই ২৫ জনের মধ্যে ২০ জনকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। বাকি পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাবাসের দণ্ড। নিম্ন আদালতের সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল খুনিরা। কিন্তু, তাতেও রক্ষা হল না। নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখল উচ্চ আদালত।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালে যে তরুণকে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছিল, তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বা বুয়েট - এর একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। যেহেতু তিনি ফেসবুকে তৎকালীন সরকারের সমালোচনা করেছিলেন, তাই সংশ্লিষ্ট ২৫ জন ছাত্র ধরেই নিয়েছিল, সমালোচক ওই ছাত্র বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত-ই-ইসলামির ছাত্র শাখা 'ছাত্রশিবির'-এর সদস্য।
এরপরই আবরার ফাহাদ নামে ওই ছাত্রের উপর হামলা চালায় আততায়ীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্য়াম্পাসে ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে উঠে আসে, ওই ছাত্রের উপর হামলাকারীরা সকলেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন - ছাত্র লিগের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
তদন্তে আরও জানা যায়, হাসিনা সরকারের সমালোচনা করার 'অপরাধে' আবরার ফাহাদকে টানা প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে ক্রিকেট ব্য়াট, উইকেট প্রভৃতি দিয়ে মারধর করা হয়। তাতেই প্রাণ যায় তাঁর।
তবে, এই ঘটনা সামনে আসার পর তৎকালীন প্রশাসনও যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। স্থির করা হয়, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে শুনানি হবে। সেই অনুসারে, ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওই আদালত ঘটনার চার্জ গঠন করে। মামলায় অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হয়।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর দোষীদের মধ্যে ২০ জন ছাত্রকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে বাকি পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সেই শাস্তি লঘু করার দাবিতে এবং নিম্ন আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় খুনিরা। আজ (১৬ মার্চ, ২০২৫) ছিল সেই মামলার শুনানি। কিন্তু, উচ্চ আদালত দোষীদের দাবি খারিজ করে দিয়েছে এবং নিম্ন আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রায়কেই সমর্থন করেছে। অর্থাৎ - ওই ঘটনায় দোষী ২০ জনের ফাঁসির সাজা বহাল রাখা হল এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও বহাল থাকল।
নিহত ছাত্রের বাবা বরকত উল্লাহ এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আদালতের এই রায় এবং বিচারব্যবস্থার ভূমিকায় তিনি খুশি। কিন্তু, দোষীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তাঁর ছেলের সঙ্গে পূর্ণ সুবিচার করা হবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব, ২০ জন খুনির ফাঁসির সাজা কার্যকর করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।