ওপারের অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে এপারে চলে এলেন ১০ বাংলাদেশি হিন্দু। ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিপুরায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, বেআইনি ভাবে ভারতে প্রবেশ করায় মোট ১০ জন বাংলাদেশি হিন্দুকে আটক করা হয়েছে ত্রিপুরার ধলাই জেলার আমবাসা এলাকায়। জানা গিয়েছে, আটক বাংলাদেশিরা কিশোরগঞ্জ জেলার ধানপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। সেই পরিবারের সদস্য শঙ্করচন্দ্র সরকার স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে নাকি জানান, বাংলদেশে তাঁরা নিরাপদ নন। হামলার মুখে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা যাচ্ছে না। এই আবহে এপারে চলে এসেছেন সপরিবারে। পেশায় নাকি তিনি অটোচালক। শঙ্করের দাবি, তিনি ভারতের জেলে থাকবেন, কিন্তু বাংলাদেশে ফিরবেন না। (আরও পড়ুন: 'পায়খানা পরিষ্কার করায় কৃতিত্ব…', ৪ দিনে কলকাতা দখলের 'হুংকারের' জবাব তথাগতর)
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে হিন্দু মহিলা খুনে সামনে এল ‘চিন্ময়-যোগ’, সরব এপার বাংলার নেতারা
রিপোর্ট অনুযায়ী, শঙ্কররা সারা রাত জঙ্গলে কাটিয়ে তার পর সীমান্ত পার করে ত্রিপুরায় ঢোকে। সীমান্ত পার করতে তাঁদের একজন সাহায্য করেছিলেন। পরে তাঁরা আমবাসায় আসেন। সেখান থেকে শিলচরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। সেখানেই তাঁদের আটক করা হয়। উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। (আরও পড়ুন: এবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে সরব ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন, ইউনুসকে লেখা হল চিঠি)
আরও পড়ুন: ভারতীয় সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় ঐতিহ্যের ধ্বংসের প্রতীক আদিনা মসজিদ, বললেন BJP নেতা
এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছে। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এবার পথে কুণাল ঘোষ, বললেন...)
আরও পড়ুন: ভারতীয় হাইকমিশন অভিযানে ছাত্রদল-যুবদল, যান চলাচল বন্ধ ঢাকার নয়াপল্টনে
এদিকে চট্টগ্রামের পাশাপাশি সম্প্রতি সুনামগঞ্জেও হিন্দুরা আক্রান্ত হন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও নীলফামারি এবং ঠাকুরগাওঁতেও নাকি হিন্দুরা আক্রান্ত মৌলবাদীদের হাতে। অভিযোগ, এই সব জায়গায় বেছে বেছে হিন্দুদের মারা হচ্ছে। তাদের দোকানে দেদার লুটপাট চলছে। এদিকে অনেক হিন্দুর বাড়িতে নাকি অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটছে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় ৮ হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অভিযোগ উঠছে, ইচ্ছে করে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী যাতে মামলা না লড়েন, তার জন্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এরই মাঝে সেদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার জারি আছে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ৯ জন হিন্দুর মৃত্যুকে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত আখ্যা দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেন ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।