দিল্লিতে কয়েকদিন আগেই একাধিক অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে। রাজধানী জুড়ে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করার অভিযান এখনও জারি আছে। আর এরই মধ্যে এবার দিল্লির স্কুলগুলিতে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সন্তানদের চিহ্নিত করতে নির্দেশিকা জারি করল দিল্লি পুর নিগম। এদিকে কোনও অনুপ্রবেশকারীকে যাতে জন্মের শংসাপত্র না দেওয়া হয়, তার জন্যেও নির্দেশিকা জারি করেছে দিল্লি পুর নিগম। উল্লেখ্য, দিল্লি পুর নিগমের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে আম আদমি পার্টির হাতে। আগামী বছরের গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত হতে চলা নির্বাচনের আবহে দিল্লিতে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বসবাস। এই আবহে এবার পুর নিগম তৎপর হল। (আরও পড়ুন: 'ধর্ম নিয়ে যারা চাপাচাপি করে…', বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে বলল জামাত)
আরও পড়ুন: 'এমনটা নয় যে বাংলাদেশের সব হিন্দুকে ভারতে নিয়ে আসতে হবে…', মত তথাগত রায়ের
বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় ধরা পড়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। এরই মাঝে আবার গত কয়েকদিনে শীত বেড়েছে। তারই সঙ্গে ভোরে কুয়াশাও বেড়েছে। যার ফলে অনুপ্রবেশকারীদের সুবিধা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সবের মাঝেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, বেআইনি ভাবে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারেন ভারতে। অপরদিকে মায়ানমারে আরাকান আর্মি রাখাইন প্রদেশ দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশে তাই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বেড়েছে। এর চাপও পড়তে পারে ভারতে। (আরও পড়ুন: খেলার মাঠে মোদীর কুটনীতি, আরব গালফ কাপ উদ্বোধনে সাক্ষাৎ কুয়েতের আমিরের সঙ্গে)
আরও পড়ুন: আন শহরও আরাকান আর্মির দখলে, রাখাইন প্রদেশে আরও শক্তিবৃদ্ধি বিদ্রোহীদের
এহেন পরিস্থিতিতে দিল্লিতে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতে অভিযান শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরই পুলিশকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আবহে গত ১২ ডিসেম্বর, শুধুমাত্র একদিনেই নাকি ২০ জন বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছিল দিল্লি পুলিশ। পূর্ব দিল্লির সীমাপুরিতে বাস করছিলেন এই বাংলাদেশি অনুপ্রেশকারীরা। জানা গিয়েছে, দিল্লির কালিন্দি কুঞ্জ, শহিরবাগ, জামিয়া নগরেও একই ধরনের অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সেখনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের আইডি কার্ড ও আধার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর চালু হওয়া এই অভিযান ২ মাস ধরে চলার কথা। (আরও পড়ুন: 'ভারতকে খাটো করে দেখবেন না', বাংলাদেশকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি মিঠুনের)
আরও পড়ুন: জার্মানিতে 'প্রাক্তন মুসলিমের' হামলায় আহত ৭ ভারতীয়, ঘটনায় মুখ খুলল দিল্লি
এর আগে সম্প্রতি বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় চার হিন্দুকে গ্রেফতার করা হয়েছিলেন। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেবনগড় ইউনিয়নের সুকানী সীমান্তের ৭৪০ নম্বর মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাব–পিলার এলাকা থেকে একই পরিবারের ৩ সদস্য সহ মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধৃতরা সকলেই বাংলাদেশি নাগরিক বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের নাম - মণিরাম বর্মণ (৫২), তাঁর স্ত্রী হীরা রানি বর্মণ (৩৫), মণিরামে প্রথম স্ত্রীর ছেলে (প্রথম স্ত্রীর) রিপন বর্মণ (২১) এবং প্রতিবেশী নিমাই চন্দ্র বর্মণ। ধৃতরা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ধোন্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঠাকুরগাওঁয়ের এক দালালচক্রের সাহায্যে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন এই চার বাংলাদেশি। সেই সময় বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের দেখে ফেলে এবং বিজিবিকে অবগত করে। তখন বিজিবি তাঁদের গ্রেফতার করে।
অপর এক ঘটনায় বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের এক নাবালিকা এপারে চলে এসেছিলেন এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, আতঙ্কে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন ১৭ বছর বয়সি এক নাবালিকা। তবে এপারে এসে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছেন সেই তরুণী। পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে সেই তরুণীকে তুলে দেয় বিএসএফ। ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তর দিনাজপুরে। ধরা পড়ার পরে সেই তরুণী দাবি করেছেন, তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে বিগত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই মৌলবাদীরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। তবে সম্প্রতি তাঁকে অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আসার পরিকল্পনা করে সেই নাবালিকা। তবে আইনি পথে ভিসা নিয়ে ভারতে আসতে কতদিন লাগতে পারে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তাই পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার করেন তিনি। আর তখনই বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন সেই তরুণী। এছাড়া সম্প্রতি দুই বৃদ্ধাও বাংলাদেশ থেকে এপারে এসে পুলিশের জালে ধরা পড়েছিলেন।