বাংলাদেশে বন্দিদশা কাটতে না কাটতেই এপার বাংলার রাজনীতিতে নাক গলাতে শুরু করে দিলেন ইসলামিক সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এর প্রধান জসিম উদ্দিন রহমানি! সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বাংলাকে মোদীর শাসন থেকে মুক্ত করুন এবং এর স্বাধীনতা ঘোষণা করুন'!
এখানেই থামেননি ওই বিচ্ছিন্নতাবাদী। ভারতীয় ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ জম্মু-কাশ্মীর নিয়েও মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর বার্তা, প্রয়োজনে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাহায্য নিয়ে 'মুক্ত জম্মু ও কাশ্মীর' গড়ে তোলা হবে!
প্রসঙ্গত, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আদতে জঙ্গিগোষ্ঠী আকিস (আল-কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট)-এর শাখা সংগঠন। যাকে ভারতের মাটিতে একটি নিষিদ্ধ গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত ও ঘোষিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারই জসিম উদ্দিন রহমানিকে মুক্তি দিয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে-র প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে, একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় রহমানিকে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত সম্পর্কে এই ধরনের একের পর এক আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। খুব সম্ভবত এই ভিডিয়ো কোনও হাসপাতালে রেকর্ড করা হয়। ঢাকার একটি সূত্র এর সত্যতা যাচাই করেছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রহমানিকে গ্রেফতার করা হয়। কট্টর ইসলামের বিরোধী ও সমালোচক হিসাবে পরিচিত আহমেদ রাজীব হায়দর নামে এক ব্লগারকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ ছিল, ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে তিনিই হায়দরকে খুন করতে ছাত্রদের উস্কানি দেন।
প্রিন্ট-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সংশ্লিষ্ট ভাইরাল ভিডিয়োয় রহমানিকে ভারতের উদ্দেশে রীতিমতো হুমকি দিতে শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি ভারতকে সতর্ক করছি। বাংলাদেশ সিকিম বা ভুটানের মতো নয়। এই দেশ ১৮ কোটি মুসলমানের দেশ। যদি আপনারা বাংলাদেশের দিকে এক পাও অগ্রসর হন, আমরা চিনকে বলব, যাতে তারা চিকেন নেক (সিলিগুড়ি করিডোর) রুদ্ধ করে দেয়। আমরা সেভেন সিস্টার্সকে (উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য) বলব, স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করতে।'
একইসঙ্গে রহমানি বলেন, 'কাশ্মীরকে বলুন, স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একযোগে কাশ্মীরকে স্বাধীনতা অর্জন করতে সাহায্য করবে। আমরা কাশ্মীরের স্বাধীনতার স্বার্থে লড়াই করব। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব, মোদীর শাসন থেকে পশ্চিমবঙ্গকে স্বাধীন করে স্বাধীন বাংলা ঘোষণা করতে। আমি শিখদের বলব, আপনাদেরও সময় এসে গিয়েছে। এবার স্বাধীনতার ডাক দিন, সেইসব শিখদের, যাঁরা খলিস্তানি, যাঁরা ভারতের প্রত্যেক প্রদেশে রয়েছেন, আপনাদের সময় এসে গিয়েছে।'
একদিকে যেখানে ইউনুস বলছেন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, সেখানে তাঁরই সরকারের দ্বারা মুক্ত করা উগ্রপন্থী কার্যত ভারতের খণ্ড খণ্ড করে দেওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছে। এখনও পর্যন্ত এভাবে উস্কানি ছড়ানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়নি। সেই রকম পরিস্থিতিতে আদৌ বাংলাদেশের নয়া সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গঠনে বাস্তবে কতটা আন্তরিক, সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।