গ্রাহকদের লকার পরিষেবা নিয়ে কোনওভাবে দায় এড়াতে যাবে না। বরং লকারের সুরক্ষার দায় আছে ব্যাঙ্কগুলির। শুক্রবার এমনই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।
সেই মর্মে নির্দেশকা জারি করে বিচারপতি মহন এম স্বান্তনাগৌড়া এবং বিচারপতি বিনীত সারনের বেঞ্চ জানিয়েছে, গ্রাহক সুরক্ষা আইনের আওতায় পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে গ্রাহকদের লকার বা কোনওরকম সম্পদ জমা রাখার ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ এবং চালানোর দায়িত্ব আছে ব্যাঙ্কের। উপযুক্তভাবে লকারের কাজ চালানো, লকারের অনুমোদনহীন ব্যবহার আটকানো এবং চুরি রুখতে উপযুক্ত সুরক্ষা প্রদানের বিষয়টিও সেই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হযেছে, ‘এই কারণে লকার ব্যবহার করেন গ্রাহকরা, যাতে আশ্বস্ত হতে পারেন যে উপযুক্তভাবে তাঁদের সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখা হচ্ছে।’
একইসঙ্গে শীর্ষ আদালতে পর্যবেক্ষণ, বর্তমান বিশ্ব যেভাবে ক্রমশ নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমজনতার কাছে আরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে লকার পরিষেবা। সেক্ষেত্রে লকার পরিষেবা দিলে কোনওভাবে দায় এড়াতে পারবে না ব্যাঙ্কগুলপি। দুই সদস্যের বেঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, ‘ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না এবং দাবি করতে পারে না যে লকার পরিষেবার জন্য গ্রাহকদের প্রতি কোনও দায় নেই। তার ফলে নৈরাজ্য তৈরি হবে। যেখানে লকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের ফাঁক থেকে যাবে। তার ফল ভুগতে হবে গ্রাহকদের।’ বিচারপতিরা জানান, ব্যাঙ্ক যদি এরকম পদক্ষেপ করে, তাহলে শুধুমাত্র যে গ্রাহক সুরক্ষা আইন লঙ্ঘিত হবে, তা নয়। একইসঙ্গে লগ্নিকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতায় ধাক্কা দেবে এবং দেশের অর্থনীতির সম্মানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কলকাতায় এক ব্যক্তির মামলায় সেই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ভাড়া না দেওয়ার জন্য ১৯৯৪ সালে ওই ব্যক্তির ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা শাখার লকার ভাঙা হয়েছিল। তা নিয়ে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে গ্রাহকের প্রতি যে দায়িত্ব আছে, লকার ভেঙে তা ভয়ংকরভাবে ‘অবজ্ঞা’ করেছে ব্যাঙ্ক। ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। মামলার খরচের জন্য আরও এক লাখ দিতে হবে। ব্যাঙ্ককে সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়া বা লকার ভাঙার সময় যে কর্মীরা ভুল করেছিলেন, তাঁদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।