আমেরিকায় ট্রাম্প জমানা ফিরতে না ফিরতেই কি গণতন্ত্রের জলাঞ্জলি হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা? অভিজ্ঞ মহল বলছে, তাঁর কথায় নাকি তেমনই সুর শোনা যাচ্ছে!
গত বৃহস্পতিবার ওবামা ফাউন্ডেশনের ডেমোক্রেসি ফোরামে বক্তৃতা করেন বারাক। সেখানে তাঁকে আমেরিকার গণতন্ত্র রক্ষা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাঁকে মন্তব্য করতে শোনা যায়, 'একটি সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে'। তাঁর মতে, যখন কোনও গোষ্ঠী 'স্থায়ীভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়', তখন তারাই এমন আচরণ করে।
ওবামা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সম্প্রতি আমেরিকায় এমন কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে বা পদক্ষেপ করার কথা বলা হচ্ছে, যাতে একাধিক গণতান্ত্রিক আদর্শ ক্ষুণ্ণ হতে পারে। যেমন - ভোটারদের অধিকার লোপ, সেনাবাহিনীর মতো একটি প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণ এবং বিরোধী রাজনীতিকদের দমিয়ে রাখার জন্য বিচারব্যবস্থার অপপ্রয়োগ।
ওবামা বলেন, 'দেখুন, যখন আমরা আমাদের চাহিদা মতো সবকিছু পেয়ে যাই, তখন গণতন্ত্রকে রক্ষা করা বিরাট কোনও বড় কথা নয়। কিন্তু, যখন আমরা আমাদের চাহিদা মতো জিনিস পাই না। তখনই গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার পরীক্ষা দিতে হয়।...'
'...এর অর্থ হল - একটি গণতন্ত্রে আমাদের সকলকে এমন একটি পথ খুঁজে বের করেত হবে, যেখানে আমরা সকলে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী হিসাবে একে অপরের থেকে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও একইসঙ্গে পাশাপাশি বেঁচে থাকতে পারব।'
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই একটি খবর সামনে এসেছিল। দাবি ছিল, দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে, ক্ষমতা হাতে পাওয়ার প্রথম দিনেই নাকি একটি এগজিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আগামী ২০ জানুয়ারি ফের একবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসবেন ট্রাম্প। শোনা যাচ্ছে, ওই দিনই এই কাজ করবেন তিনি। এবং সেই নির্দেশিকার মাধ্যমে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামীদের কাজ করার পথ বন্ধ করবেন ট্রাম্প!
স্বাভাবিকভাবেই এই খবর সামনে আসতেই নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি আমেরিকাকে ফের মহান করার ডাক দিয়ে ক্ষমতায় ফেরা ট্রাম্প আদতে নানাভাবে মার্কিনিদের একাংশকে দমাতে চাইছেন?
দ্য মিরর ইউএস- এ এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল, তা এককথায় ভয়ঙ্কর। তাদের দাবি, ট্রাম্প গদিতে ফিরেই সেনাবাহিনীতে কর্মরত রূপান্তরকামীদের গায়ে 'আনফিট' বা 'শারীরিকভাবে অক্ষম' - তকমা সেঁটে দিয়ে তাঁদের বাহিনী থেকে ছেঁটে ফেলার ব্যবস্থা করতে চাইছেন! যা মানবাধিকারের ভয়ঙ্কর লঙ্ঘন বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
এছাড়াও, বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ট্রাম্প এমন কিছু লোকজনকে নিয়োগ করছেন, যাঁদের সঙ্গে সেই কাজের কোনও সম্পর্ক নেই। অভিযোগ উঠছে, ট্রাম্প আসলে নিজের আসনের পাকা করতেই স্বজনপোষণ শুরু করেছেন এবং এর সঙ্গে আমেরিকাকে পুনরায় মহান হিসাবে গড়ে তোলার কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকী, ট্রাম্পের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশিষ্টরাও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এবার ওবামার গলাতেও কার্যত সেই সুরই শোনা গেল।