তাঁদের বিমানে কোনও হুইল চেয়ার নেই। তাই বিমানে সওয়ার বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীকে কার্যত মেঝেয় হামাগুড়ি দিয়ে (শরীর ঘষটে) শৌচালয় যেতে বললেন বিমানকর্মীরা! বাধ্য হয়ে সেটাই করলেন ওই যাত্রী।
চরম ন্যক্কারজনক এবং মানবতার প্রতি নিদারুণ অবমাননাসুলভ এই ঘটনাটি যাঁর সঙ্গে ঘটেছে, তিনি একজন প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক। নাম ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার। বিবিসি-র এই সাংবাদিক মূলত যুদ্ধের খবর সংগ্রহ ও পরিবেশন করেন।
ফ্র্যাঙ্ক নিজে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর সঙ্গে ঘটা এই নির্লজ্জ ঘটনার কথা জানিয়েছেন। কীভাবে তাঁকে বিমানের মেঝেয় 'হামাগুড়ি' দিতে হয়েছে, সেই ছবিও এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন তিনি।
সেই ছবির ক্যাপশনে ফ্ল্যাঙ্ক লিখেছেন, 'ওয়াও! এটা ২০২৪ এবং আমি ওয়াশ্য় থেকে ফেরার পথে এলওটি পোলিশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের মেঝেয় হামাগুড়ি দিয়ে শৌচালয় পর্যন্ত আসতে বাধ্য হলাম। কারণ, তাদের বিমানে কোনও হুইল চেয়ার থাকে না!'
বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের প্রতি বিমান সংস্থার এহেন আচরণ এবং তাদের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন ওই ব্রিটিশ সাংবাদিক।
উল্লেখ্য, খবর সংগ্রহের কাজ করতে গিয়েই প্রায় ২০ বছর আগে ফ্র্যাঙ্ককে নিজের হাঁটাচলার ক্ষমতা হারাতে হয়। এক আল-কায়দা জঙ্গির ছোড়া গুলিতে চিরকালের মতো চলন শক্তি হারান ওই সাংবাদিক। বর্তমানে তাঁর বয়স ৬৩ বছর।
তবে, এই এহেন অপমানের পরও ফ্র্যাঙ্ক কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিমানকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও দোষারোপ করেননি। বরং, তিনি দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাকে।
ফ্র্যাঙ্ক জানিয়েছেন, যে বিমানে তিনি সওয়ার ছিলেন, সেটিতে কর্তব্যরত বিমানকর্মীরা তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ভদ্র ব্যবহার করেছেন এবং তাঁর এহেন দুর্ভোগের জন্য বারবার ক্ষমা চেয়েছেন।
ফ্র্যাঙ্কের বক্তব্য হল, এটা ২০২৪ সাল হলেও, বর্তমান সময়ে বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত, সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা তা পরিবেশন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ঘটনার কথা উল্লেখ করে ফ্র্যাঙ্ক বলেন, উড়ান শুরু হওয়ার পর তিনি এক বিমানকর্মীকে জানান, তাঁকে শৌচালয়ে যেতে হবে। এর জন্য বিমানকর্মীরা কি কোনও সাহায্য করতে পারবেন?
জবাবে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিমানকর্মী জানান, তাঁর পক্ষে ফ্র্যাঙ্ককে সাহায্য করা সম্ভব নয়। কারণ, তাঁরা উড়ানের সময় বিমানে কোনও হুইল চেয়ার রাখেন না। এই অবস্থায় কেউ যদি ফ্র্যাঙ্ককে তুলে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন, সেটাও খুব একটা সহজ হবে না।
এরপর বাধ্য হয়েই ফ্র্যাঙ্ক চিৎ হয়ে শুয়ে, বিমানের মেঝের উপর দিয়ে নিজের শরীর ঘষটে শৌচালয় পর্যন্ত যান! তারপর সেভাবেই কোনও মতে নিজের আসনে ফেরেন!
উল্লেখ্য, এর আগেও বিমানে চড়ে অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে ফ্র্যাঙ্ককে। তাঁর এক্স অ্য়াকাউন্টেই তার প্রমাণ রয়েছে। ২০১৮ সালে অবতরণের দীর্ঘক্ষণ পরও ফ্র্যাঙ্ককে ফাঁকা বিমানে বসে থাকতে হয়েছিল। কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্মীরা তাঁর হুইল চেয়ার খুঁজে পাচ্ছিলেন না! ঘটনাটি ঘটেছিল হিথরো বিমানবন্দরে।