দিল্লিতে আপের ভরাডুবি হয়েছে। দলের সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালও নিজের আসন বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই অবস্থায় পাঞ্জাবে আপের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল রাজনীতিতে। এই জল্পনা সামনে আসে বিজেপির এক প্রবীণ নেতার দাবির পরে। তিনি দাবি করেছিলেন, যে কেজরিওয়াল মানকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর এই দাবির পরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজনীতিতে। তবে আদৌও এমনটা হতে চলেছে কিনা সে বিষয়টি নিজেই স্পষ্ট করলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘একসঙ্গে থাকলে এমন হতো না’, দিল্লি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আপ–কংগ্রেসকে তোপ মমতা
মঙ্গলবার রাজধানীতে কাপুরথালা হাউসে আপের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেজরিওয়াল, দলের প্রবীণ নেতা মণীশ সিসোদিয়া, মুখ্যমন্ত্রী মান এবং পঞ্জাবের সমস্ত বিধায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ দলীয় নেতারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই দাবি হেসে উড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা রাজৌরি গার্ডেনের নবনির্বাচিত বিধায়ক মনজিন্দর সিং সিরসা একটি ভিডিয়োতে দাবি করেছেন, ‘আপের জাতীয় আহ্বায়ক মানকে ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
দিল্লির নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লিতে পঞ্জাবের বিধায়কদের একটি সভা ডেকেছেন। শোনা যাচ্ছে, তিনি মানকে অযোগ্য বলে চিহ্নিত করে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি মহিলাদের জন্য ১,০০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, মাদকের অপব্যবহার রোধে ব্যর্থ হয়েছেন এবং পঞ্জাবের পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছেন। এখন তিনি সমস্ত ব্যর্থতা ভগবন্ত মানের উপর চাপাতে চান। তিনি পঞ্জাবের আপ বিধায়কদের বলতে বাধ্য করছেন যে কেজরিওয়াল একজন ভালো মানুষ এবং তাঁর পরিবর্তে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত।’
এসম্পর্কে মান বলেন, ‘ওদের বলতে দিন।’ তিনি আরও আশ্বাস দিয়েছেন, যে পঞ্জাব সরকার মহিলাদের প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। এদিকে, কংগ্রেস নেতা প্রতাপ সিং বাজওয়া দাবি করেছেন, পঞ্জাবের ২০ জনেরও বেশি আপ বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতাপ বাজওয়া প্রায় তিন বছর ধরে এই কথা বলছেন। তাঁকে তৃতীয়বারের মতো দিল্লিতে (কংগ্রেস) বিধায়কদের সংখ্যা গণনা করতে বলুন। দিল্লি নির্বাচনে শূন্য আসন পাওয়ার হ্যাটট্রিক করার জন্য কংগ্রেসকে উপহাস করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা রক্ত-ঘাম দিয়ে এই দলটি গড়ে তুলেছি। আসলে তাদের দল বদলানোর সংস্কৃতি আছে। তাদের একজন নেতা ঢাক বাজিয়ে আপের পরাজয় উদযাপন করেছেন।’
উল্লেখ্য, ১১৭ সদস্যের পঞ্জাব বিধানসভায় আপের ৯৩ জন এবং কংগ্রেসের ১৬ জন বিধায়ক রয়েছে। এদিনের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কেও মান বলেন, দিল্লিতে ব্যাপক প্রচারের জন্য কেজরিওয়াল আপ কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দিল্লিতে আপ অনেক কাজ করেছে কিন্তু জয়-পরাজয় রাজনীতির অংশ। আমরা দিল্লিতে জনগণের রায় মেনে নিয়েছি। এখন আমরা পঞ্জাবকে একটি মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি।’ তিনি জানান, সমস্ত বিধায়ক কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁরা বৈঠকের জন্য দিল্লিতে এসেছিলেন। পঞ্জাবে কোনও পরিবর্তন হবে না।