ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার সেই দুর্ঘটনা আজও রক্ত হিম করে দেয় অনেকের। সেই বিভীষিকাময় রাতের প্রায় ৪০ বছর পর অবশেষে সরানো হল বিষাক্ত বর্জ্য। গতকাল রাতে ভোপাল থেকে একধিক ট্রাকে করে খুব সাবধানে সেই বর্জ্য পদার্থ ভোপাল থেকে নিয়ে যাওয়া হল ইন্দোরের কাছে অবস্থিত পিথমপুরে। জানা গিয়েছে, মোট ৩৩৭ টন বর্জ্য পদার্থ ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে সরানো হয় গতকাল। গ্রিন করিডর করে সন্তর্পণে এই বর্জ্য পরিবহণ করা হয়। ভোপাল থেকে পিথমপুরের দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। আজ ভোরে সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে এই বর্জ্য বহনকারী ট্রাকগুলি। (আরও পড়ুন: আমেরিকায় ১৫ জনকে খুন করা 'জঙ্গি' প্রাক্তন সেনাকর্মী, তার গাড়িতে ISIS পতাকা: FBI)
জানা গিয়েছে, গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য সরানোর জন্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কারখানা চত্বরের সাফাই শেষ করে গতকাল রাত ৯টা ৫ মিনিটে ১২টি ট্রাকে করে ৩৭৭ টন বর্জ্য পদার্থ ভোপাল থেকে সরানো হয়। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট এর আগেও একাধিকবার ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল। তবে সেই কাজ হয়নি। এই আবহে গত ডিসেম্বরে এই সংক্রান্ত মামলায় আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে। এই বর্জ্য সরানোর জন্যে চার সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয় উচ্চ আদালত। এই আবহে বিশেষ কন্টেইনার নিয়ে একের এক ট্রাক গত রবিবার থেকেই ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানায় পৌঁছে যায়। সেই সব ট্রাকে করেই আজ ভোরে সেই বর্জ্য পদার্থ পৌঁছে গেল পিথমপুরে।
জানা যায়, যে ১২টি ট্রাকে করে বর্জ্য পদার্থ ভোপাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেগুলিতে জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো ছিল। পিথমপুরে আজ সেই বর্জ্য পদার্থ পোড়ানো হবে। যা নিয়ে আবার ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে পিথমপুরবাসীদের মধ্যে। তবে সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই বর্জ্য পদার্থ পোড়ানোর জেরে পিথমপুরে কোনও দূষণ হবে না। তবে বর্জ্য পোড়ানো হলে সেখান থেকে ছাইয়ে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা চালানো হবে। এদিকে বর্জ্য পুড়িয়ে যে ছাই হবে, তা দ্বিস্তরীয় আবরণে মুড়ে মাটির নীচে পুঁতে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর রাতে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস লিক করার জেরে মৃত্যু হয়েছিল ৩৭৮৭ জনের। তবে এই পরিসংখ্যানটা সরকারি। বেসরকারি ভাবে দাবি করা হয়, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এছাড়া এই দুর্ঘটনার জেরে প্রায় ৫ লাখ মানুষের শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল। এরপর থেকে বিগত ৪০ বছর বন্ধ থেকেছে ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা। চার দশক পর সেই কারখানা থেকে দুর্ঘটনার স্মৃতি হিসেবে থাকা বর্জ্য সরানো হল।