ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে চিনের ‘আক্রমণাত্মক গতিবিধি বৃদ্ধি’ আমেরিকার বড় মাথাব্যথার কারণ। পাশাপাশি, ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পদক্ষেপ ‘অসম্পূর্ণ’। সম্প্রতি এই মন্তব্য করেছেন পেন্টাগন প্রধান হিসেবে নতুন প্রেসিডেন্টজো বাইডেনের পছন্দের প্রার্থী জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) লয়েড অস্টিন।
মঙ্গলবার সেনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির এক শুনানিতে অস্টিন জানান, পেন্টাগনের দায়িত্ব পেলে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার প্রতিরক্ষাজনিত ঘনিষ্ঠতার বিকাশ ঘটাবেন। এক কথায়, আগামী দিনে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে প্রয়াসী অস্টিন।
পেন্টাগনের প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান বংশোদ্ভূত প্রধান হওয়ার জন্য লয়েড অস্টিনকে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ও সেনেটের অনুমোদন পেতে হবে। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, পেন্টাগন প্রধানের দায়িত্ব নিতে হলে প্রতিরক্ষা সচিবকে তাঁর অবসরের পরে ৭ বছর অপেক্ষা করা আবশ্যিক। ২০১৬ সালে কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর গ্রহণ করেন অস্টিন।
সেনেট কমিটির কাছে দেওয়া বয়ানে তিনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক স্তরে আমেরিকার উদ্যোগে প্রধান নজর রাখা দরকার এশিয়ার উপরে। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বিশেষ করে চিনই এখন মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের প্রধান সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লিখিত বিবৃতিতে অস্টিন বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের নিরন্তর চেষ্টায় মার্কিন সেনাবাহিনীকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলা, যাতে তা রাশিয়া ও চিনের মতো আতঙ্ক সৃষ্টিকারী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরিতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য পদক্ষেপ জরুরি।’
তাঁর মতে, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির দ্রুত আধুনিকীকরণ এবং আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী বৃদ্ধি আমেরিকা ও তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলির জন্য উল্লেখযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা সংকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
২০১৮ সালে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ করার পরে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সহযোগিতার বিষয়ে জানতেচাওয়া হলে অস্টিন বলেন,’আমি জানি আমেরিকার অনুরোধ মেনে নিয়ে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক পদক্ষেপ করেছে পাকিস্তান। এ ছাড়া লস্কর-ই-তৈবা ও জইশ-ই-মহম্মদ এর মতো ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধেও তারা পদক্ষেপ করেছে, যদিও এখনও পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি।’
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধের সঙ্গে আরও বেশ কিছু কারণে পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রভাবিত হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান শান্তি প্রক্রিয়া ও পুলওয়ামা সন্ত্রাস হানা পরবর্তী নাশকতা বৃদ্ধি।’
তাঁর মতে, আফগানিস্তানের যে কোনও রাজনৈতিক মীমাংসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে পাকিস্তানের। এ ছাড়া আল-কায়দা ও ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ এর মতো সংগঠনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং আঞ্চলিক স্থিতি বজায় রাখতে পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন আমেরিকার। তবে পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করতে পাক সরকারকে চাপ দেবে আমেরিকা, বলেছেন অস্টিন।
সেই সঙ্গেতাঁর দাবি, ভারতকে আমেরিকার অন্যতম প্রধান নিরাপত্তা সহায়কের মর্যাদা দিতে তিনি যথাসাধ্য উদ্যোগ নেবেন।