'এক দেশ, এক নির্বাচন' বাস্তবায়নের দিকে একধাপ এগোল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সূত্রের খবর, 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি ২০২৪ সালের মার্চে যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে সবুজ সংকেত দেওয়া হল। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর পৌরহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। আর সেই বৈঠকেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-র রিপোর্টে অনুমোদন পড়ে গিয়েছে। যে বিষয়টি নিজেদের তৃতীয় দফায় কার্যকর করতে মরিয়া মোদী সরকার। সূত্রের খবর, 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-র আওতায় পুরো দেশে একইসঙ্গে লোকসভা নির্বাচন এবং প্রতিটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর সেই নির্বাচনের ১০০ দিনের মধ্যে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের ভোট করার সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে।
প্রথম থেকেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-র পক্ষে মোদী
২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-র বিষয়টি উত্থাপন করে আসছেন মোদী। গত মাসে লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-র পক্ষে জোরালোভাবে সওয়াল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছিলেন যে দেশে কোনও না কোনও নির্বাচন লেগেই আছে। যা দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে।
'খরচ কমবে, উন্নয়নের গতি বাড়বে'
তারইমধ্যে নাম গোপন রাখার শর্তে রবিবার বিজেপির এক শীর্ষকর্তা বলেন, 'এনডিএ সরকারের বর্তমান কার্যকালেই এক দেশ, এক নির্বাচন চালু করা হবে।' বিজেপির বক্তব্য, পুরো দেশে যদি একইসঙ্গে লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা ভোট হয়, তাহলে খরচ কমবে।
সেইসঙ্গে বিজেপির যুক্তি, একসঙ্গে পুরো দেশে নির্বাচন হলে আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর থাকার মেয়াদ কমবে। আদর্শ আচরণবিধি যত বেশিদিন কার্যকর থাকে, ততদিন দেশের উন্নয়নের কাজ থমকে থাকে। বারবার সেইসব কাজ আটকে যায়। সেই পরিস্থিতিতে পুরো দেশে একইসঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন করলে আদর্শ আচরণবিধির মেয়াদ কমবে। ফলে উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত হবে বলে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে।
আগেও দেশে একসঙ্গে নির্বাচন হত, কবে পালটে গেল?
১৯৫১ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দেশে একইসঙ্গে নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু ১৯৬৮ সাল এবং ১৯৬৯ সালে কয়েকটি বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার পরে এবং ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার পরে আলাদাভাবে নির্বাচন করা হতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে নির্বাচন কমিশনের বার্ষিক রিপোর্টেও 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-র ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। তবে দেশে এখনও আলাদাভাবেই নির্বাচন হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকার কী বলল?
সেই আবহে মোদী সরকার ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ চালু করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিরোধীদের একাংশের আপত্তি থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের আশা, আলোচনার মাধ্যমে পুরো বিষয়টির সমাধান হবে। এখন যে বিরোধী দলগুলি বিরোধিতা করছে, যত সময় যাবে, তত সেই দলগুলির মধ্যে থেকেও ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’-র পক্ষে স্বর উঠবে। তবে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ কার্যকর হলে সেই ব্যবস্থার আওতায় কবে প্রথম ভোট হবে, তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে চায়নি মোদী সরকার।