স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির দিক থেকে এঁদের অর্থের অঙ্ক অনেককেই অবাক করছে। তবে, বিহারের ৩১ জন মন্ত্রী নিজেদের সম্পত্তির পরিমাণের খতিয়ান হলফনামায় দিতেই অনেকেরই চক্ষু চরকগাছ হয়েছে! দেখা গিয়েছে, বিহারের ১৬ জন মন্ত্রীর সম্পত্তির মধ্যে উজ্জ্বলভাবে জায়গা করে নিয়েছে দামী তাক লাগানো বন্দুক। দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রিসভার অনেকের সংগ্রহেই যা গয়নার পরিমাণ রয়েছে, তাও অবাক করার মতো।
৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকার মধ্যে একাধিক নামী দামী বন্দুক বিহারের ১৬ জন মন্ত্রীর দখলে রয়েছে। তাঁদের দেওয়া সম্পত্তির পরিমাণের হিসাব থেকে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী রেনুদেবীও রয়েছেন এই ১৬ জন মন্ত্রীর মধ্যে। ফলে তাঁরও যে বন্দুক সংগ্রহের বিষয়ে শখ রয়েছে তা নিয়ে জোর চর্চা সমস্ত মহলে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিহারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিজেদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব হলফনামায় জানান। মন্ত্রিসভার সদস্যদের স্বচ্ছ্বতা রক্ষায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন ২০১১ সাল থেকে। সেই অনুযায়ী বছর শেষে বিহারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিজের সম্পত্তির পরিমাণ পেশ করতে হয়। ২০২১ সালে এই পেশ করা হলফনামাগুলি থেকে উঠে এসেছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আয়ব্যায়ের খতিয়ান। নীতীশ কুমারের স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে ৫৮.৮৫ টাকার একটি ফ্ল্যাটের উল্লেখ রয়েছে। যা দিল্লিতে অবস্থিত। এছাড়াও তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি ১৬.৫১ লাখ টাকা । দেখা যাচ্ছেস জেডিইউ স্ট্রংম্যান নীতীশের নগদের অঙ্ক অনেকটাই কমে গিয়েছে গতবছরের তুলনায়। ২০২০ সালের হলফানামায় নীতীশ জানিয়েছেন তাঁর নগদের অঙ্ক ছিল ৩৫,৮৮৫ টাকা। এরপর ২০২১ সালে তা কমে হয়েছে ২৯, ৩৮৫ টাকা। তবে নীতীশ কুমারের ছেলে নিশান্ত তাঁর থেকে এই বিষয়ে এগিয়ে। নিশান্তের সম্পত্তিতে রয়েছে ১.৯৮ কোটি টাকার একটি জমি। অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১.৬৩ কোটি টাকা।
এদিকে, নীতীশ সরকারের দুই উপমুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তির অঙ্কও বেশ তাক লগানো। উপমুখ্যমন্ত্রী তারকিশোর প্রসাদ বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত সম্পত্তি ও নিজের সম্পত্তি মিলিয়ে ২ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। অন্যদিকে, নীতীশ কুমারের অপর ডেপুটি, রেনুদেবীর নগদের অঙ্ক, ৪.৫১ লাখ, আর তারকিশোর প্রসাদের নগদের অঙ্ক ৫৬ হাজার টাকা। রেনুদেবীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গত দুই বছরের তুলনায় ২০২১ সালে নগদের অঙ্ক বেড়েছে। যা তারকিশোরের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কমেছে।
তবে বিহারের মন্ত্রীদের মধ্যে সম্পত্তির অঙ্কে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বলিউড সেট ডিজাইনার থেকে রাজনৈতিক নেতা হওয়া মুকেশ সাইনি। যিনি নীতীশ সরকারে মৎস ও পশুপালন বিভাগ সংক্রান্ত মন্ত্রী। তাঁর মোট স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৮.৩৪ কোটি টাকা। ৯৮ লাখ টাকা রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডে। অস্থাবর সম্পত্তি ১.৩১ কোটি টাকা। তাঁর মোট সম্পত্তির অঙ্ক ১৩ কোটি টাকা। মন্ত্রী সুরত কুমার রামের সেভিংসের টাকাই শুধু একবছরে ৩ লাখ বেড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে হলফনামায়। এরমধ্যে দামী গয়নার অঙ্কও রয়ে গিয়েছে। এছাড়াও বিহারের, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী, জলসম্পদ মন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রীরা হলেন নীতীশ মন্ত্রিসভার কোটিপতি সদস্য। তবে মন্ত্রিসভার সবচেয়ে নজর কাড়া দিক হল মন্ত্রীদের সংগ্রহে থাকা দামী বন্দুকের তালিকা ও তাঁর দামের অঙ্কে। বিহারে ১৬ জন মন্ত্রীর দখলে রয়েছে দামী বন্দুক। এঁদের মধ্যে বিহারের জনক রামের দখলে রয়েছে ৩০.০৬ বোর রাইফেল রয়েছে ১.২৫ লাখ টাকা দামের। এছাড়াও তাঁর কাছে .৩২ বোর পিস্তল রয়েছে ৪.০৫ লাখ চটাকা দামের। পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীর দখলে রয়েছে ৪ লাখ চাকা দামের একটি বন্দুক। উল্লেখ্য, মন্ত্রিদের কাছে এত দামী বন্দুক, পিস্তল থাকার ঘটনাতে বেশ আলোচনা চলছে গোবলয়ে। তবে সমাজবিজ্ঞানী রাকেশ তিওয়ারি বলছেন, 'এটি কারও কারও জন্য একটি স্ট্যাটাস সিম্বল আর কারোর জন্য ভয় জাগিয়ে তোলার নামান্তর। ' তবে তাঁর মতে নীতীশ কুমার যেখানে 'গুড গভার্নেন্স'এর কথা বলেন, সেখানে এমনভাবে বন্দুককে নিজের সম্পত্তিতে রাখার ঘটনা খুব একটা উৎসাহব্যাঞ্জক নয়।