সেইদিন আগে থেকেই কিছুটা ভয় পেয়েছিল ওই নাবালিকা। স্কুলের প্রিন্সিপাল স্কুল ছাত্রী ওই নাবালিকাকে সেদিন ডেকেছিলেন তাঁর অফিসে। স্কুলে ফিজ বকেয়া ছিল। এরপর ছাত্রী প্রিন্সিপালের ঘরে যেতেই, স্কুলের প্রিন্সিপাল ছোট্ট মেয়েটিকে তাঁর সঙ্গে লাইব্রেরির দিকে যেতে বলেন। লাইব্রেরিতে ঢুকিয়ে নাবালিকাকে বাইরে থেকে আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ততক্ষণে লাইব্রেরির ভিতর অন্ধকার। এরপর ভয়ের চিৎকার। ততক্ষণে লাইব্রেরির ভিতর স্কুলের ডিরেক্টরের ছেলে অপেক্ষা করছিলেন। এমনই অভিযোগ নিগৃহিতার। ঘটনা ২০১৭ সালের। বর্তমানে ওই নিগৃহিতার বয়স ১৭। সেই দিনের ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে করতে গিয়ে নাবালিকা বলছে, ‘আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম…।’
বিহারের সাহারসার স্কুলের ভিতরের ওই অন্ধকার লাইব্রেরির ঘর কার্যত ওই নাবালিকার গোটা জীবন পাল্টে দিয়েছে। আতঙ্ক, যন্ত্রণা, ভয়ের এক ঘৃণ্য অভিজ্ঞতা তাকে আজও কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। ঘটনার বর্ণনায় নাবালিকা বলছে, স্কুল ডিরেক্টরের ছেলে লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করছিল ‘ সে আমার কাছে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে, আমায় অত্যাচার করে, আমার ধর্ষণ করে, আর গোটা ঘটনা ভিডিয়ো করে। ’ নাবালিকা বলছে, লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা সে করতে থাকে। তবে লাইব্রেরির বাইরে তখন দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন খোদ স্কুলের প্রিন্সিপাল। নাবালিকা বলছে,' প্রিন্সিপাল আমায় ধরে ফেলেন, আমাকে থাপ্পড় মারেন। তারপর আমার চুল , পোশাক ঠিক করে দিতে থাকেন। উনি বলেছিলেন, ক্লাসে যেতে, আর কাউকে ঘটনা নিয়ে কিছু না বলতে।' এরপর ২০১৮ সালে বালিকা বিদ্যালয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মা বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করায় ওই নাবালিকা। ততক্ষণে মেয়ের মধ্যে এক পরিবর্তন দেখতে থাকেন মা। নিজের ঘরের মধ্যে থাকা, কারোর সঙ্গে মেলামেশা না করা, এই সমস্ত পরিবর্তন মেয়ের মধ্যে দেখে অবাক হন তার মা। এদিকে, নাবালিকার সামনে তখন ন্যাশনাস এলিজিবিলিটি টেস্ট। তার জন্য বাবা মায়ের কথায় কোনও মতে রাজি হয় নাবালিকা।
এরপর ২০২২ সালে তারা সাহারসা থেকে পাটনা আসে। স্কুল আগেই ভয় দেখিয়েছিল যে, এই ঘটনা কাউকে বললে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নাবালিকা। ফলে গোটা ভয়াবহ কাণ্ড সে নিজের মনের মধ্যে রেখে রেখে ভয় পেত। এরপর শুরু হয় প্যানিক অ্যাটাক। সে বিড়বিড় করে বলতে থাকে, ‘প্লিজ আমার চুল টেনো না, আমাকে ছুঁয়ো না প্লিজ।’ এরপর পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। নাবালিকার ভাই দায়ের করে মামলা। দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে নাবালিকার পরিবার বলছে, আজও ওই নাবালিকা নিজের ওপর অত্যাচার করে। নিজেকে আঘাত করতে থাকে। সদ্য এমনই এক ঘটনার পর সে ভরতি রয়েছে হাসপাতালের আইসিইউতে।