কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে গিয়ে ঘোর বিপদে পড়েছিলেন বাংলার প্রায় ২০০ জন যুবক। বিহার পুলিশের তৎপরতায় কাটল বিপদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিহারের পুর্ণিয়া পুলিশ ওই ২০০ জনকে উদ্ধার করেছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ভুয়ো কাজের টোপ দিয়ে তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিহারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সকলেই ভুয়ো চাকরি চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই চক্রের পাণ্ডাকে এখনও পাকড়াও করতে পারেনি পুলিশ। তার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
সূত্রের দাবি, পুলিশের নজরে থাকা ওই ব্যক্তি বিহার থেকে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে এসেছে।
পুর্ণিয়ার পুলিশ সুপার কার্তিকেয় শর্মা হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিনিধিকে ফোনে জানিয়েছেন, গত প্রায় তিনমাস ধরে পুর্ণিয়ায় এই চক্রটি সক্রিয় ছিল। তিনি বলেন, 'সদর থানার অন্তর্গত রামবাগ এলাকার বিভিন্ন ভাড়া বাড়িুতে প্রায় ২০০ যুবককে কয়েদ করে রাখা হয়েছিল। আমরা তাঁদের সকলকেই উদ্ধার করেছি। এঁরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। বিভিন্ন মেডিক্যাল সংস্থায় চাকরির ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে এঁদের বিহারে আনা হয়েছিল।'
প্রসঙ্গত, দু'দিন আগেই পুর্ণিয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন কার্তিকেয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যে পাঁচজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চারজন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। পঞ্চম ব্যক্তির বাড়ি বিহারের আরারিয়ায়। তবে, চক্রের পাণ্ডা পালিয়েছে।
যদিও পুলিশ সুপারের দাবি, 'শীঘ্রই এই চক্রের পাণ্ডাকেও আমরা গ্রেফতার করে ফেলব।'
ধৃতদের পরিচয় সম্পর্কেও তথ্য মিলেছে। এদের পশ্চিমবঙ্গের চার বাসিন্দা হল - উত্তর দিনাজপুরের সুকুমার রায়, বীরভূমের তারাশঙ্কর শর্মা ও বিষ্ণু মণ্ডল এবং উত্তর ২৪ পরগনার জাহাঙ্গির। তাদের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে বিহারের আরারিয়ার শিবলাল হেমব্রমকে।
পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এই ২০০ জন যুবকের কাছ থেকে জোর করে ২১ হাজার টাকা আদায় করে অভিযুক্তরা। উদ্ধার হওয়া যুবকেরা সকলেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সদস্য। সেই কারণেই, তাঁদের ভুয়ো চাকরির টোপ দিয়ে ফাঁসানো সহজ হয়েছে। যে চক্রটি তাঁদের সঙ্গে এই প্রতারণা করেছে, সেটি পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
এই চক্রের মোডাস অপারেন্ডি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উদ্ধার হওয়া যুবকরা পুলিশকে জানান, পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চল ও মফঃস্সলগুলিতে মূলত লিফলেট ও হ্যান্ড বিল বিলি করে মেডিক্যাল সংস্থায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রচার করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করা হলে কর্মপ্রার্থীদের বলা হয়, কাজ পেতে গেলে বিহারের পুর্ণিয়ায় যেতে হবে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা অখিল মণ্ডল পুলিশকে জানিয়েছেন, 'আমরা পুর্ণিয়া পৌঁছতেই আমাদের বলা হয়, চাকরি পেতে গেলে আগে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। তার জন্য ২১ হাজার টাকা জমা রাখতে হবে। আমরা ফোন পে-র মাধ্যমে সেই টাকা দিই।'
অখিলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন জায়গায় এমন প্রায় ৫০০ জনকে আটকে রেখেছিল এই চক্রের সদস্যরা। অখিল জানান, তিনি যে ঘরে আটক ছিলেন, সেই ঘরে মোট ১০ জন থাকতেন। কিন্তু, তাঁদের একে-অপরের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি ছিল না।
অথচ, ওই যুবকদের বাধ্য করা হত, যাতে তাঁরা তাঁদের পরিচিত এবং তাঁদের মতোই আরও অনেক কর্মপ্রার্থীকে কাজের সন্ধান দেওয়ার নাম করে পুর্ণিয়ায় ডেকে আনেন। অখিল জানান, তিনিও এক বন্ধুর কাছ থেকে ফোন পেয়েই বিহারে আসেন এবং এই চক্রের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন।
এই চক্রের মাথাকে পাকড়াও করতে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিহার পুলিশ। তাদের আশা, শীঘ্রই পলাতক কিংপিনকে পাকড়াও করা সম্ভব হবে।