যদি কোনও বিদেশি বা অন্য দেশের নাগরিক, ভারতের কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে সেখানকার প্রধান হয়ে বসেন, তাহলে কি তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না? ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশি নাগরিক হওয়ার যদি যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য-প্রমাণ থাকে, তাহলেও কি কিছুই করা যাবে না?
সোমবার ঠিক এই প্রশ্ন তুলেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিহার রাজ্য নির্বাচন কমিশন। একটি বিশেষ এবং জটিল ঘটনার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের কাছে নিজেদের এক্তিয়ার জানতে চেয়ে এই প্রশ্ন তুলেছিল তারা।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নেপালের একজন নাগরিক ভারতের ঢুকে শুধু যে থাকতে শুরু করেন, তাই নয়। তিনি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং ভোটে জিতে সেই এলাকার প্রধান হয়ে যান!
যদিও এই ঘটনার কয়েক বছর আগেই তিনি নেপাল সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে নিজের নাগরিকত্ব (নেপালি) প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, সেই আবেদনের ভিত্তিতে নেপাল সরকার কোনও পদক্ষেপ করার আগেই তিনি ভারতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেন বলে অভিযোগ।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ওই ব্যক্তির প্রার্থীপদই খারিজ করে দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কারণ, নিয়ম অনুসারে, কেবলমাত্র ভারতীয় নাগরিকরাই এদেশের কোনও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।
কিন্তু, বিহারের পটনা হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের সেই পদক্ষেপই বাতিল দেয়। আদালতের বক্তব্য ছিল, একজন বাসিন্দা আদৌ দেশের নাগরিক কিনা, সেটা কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারই ঠিক করতে পারে।
পটনা হাইকোর্টের এই যুক্তি মানতে নারাজ বিহার রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তারা তাই উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা রুজু করে। সোমবার সেই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শোনার পর, এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান কী, তা জানতে চায় শীর্ষ আদালত। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারকেও পার্টি করতে হবে। একইসঙ্গে, কেন্দ্রীয় সরকারকে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে আদালতে নিজেদের বক্তব্য জমা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, এই মামলায় বিহার হাইকোর্টের আরও একটি পর্যবেক্ষণ ছিল। তা হল - রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা নেই, যার মাধ্যমে তারা কোনও প্রার্থীর প্রার্থীপদ এভাবে খারিজ করতে পারে। তা সে নির্বাচনের আগে হোক, কিংবা পরে। যদি না সেই ঘটনায় কোনও নির্বাচনী অনিয়ম হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট মামলা প্রসঙ্গে বিহার রাজ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে আরও জানিয়েছে, যে ব্যক্তিকে নিয়ে এত কাণ্ড, তাঁর নাম বিল্টু রায় ওরফে বিলাত রায় ওরফে বিলাত প্রসাদ যাদব।
তথ্য বলছে, ১৯৯৬ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর কাছে একটি বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট ছিল। কিন্তু, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তিনি সেই পার্সপোর্ট আর পুনর্নবীকরণ করাননি।
অন্যদিকে, নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ বলছে, ২০০৬-০৭ সালে তিনি নেপালের নাগরিক ছিলেন! সূত্রের দাবি, সেই নাগরিকত্ব খারিজ করার জন্য ওই ব্যক্তি ২০১৬ সালের মার্চ মাসে নেপাল সরকারকে লিখিত আবেদন জানান।
কিন্তু, সেই আবেদন অনুসারে তাঁর নেপালের নাগরিকত্ব খারিজ হওয়ার আগেই ২০২১ সালে ওই ব্যক্তি বিহারের ভালুয়াহা গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে প্রার্থী হন। এবং ভোটে জিতে পঞ্চায়েত প্রধানের কুর্সিতে বসেন।