বিলকিস বানো গণধর্ষণে অভিযুক্ত ১১ জন স্বাধীনতা দিবসের দিন মুক্তি পেয়েছে। এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। এবার নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে মুখ খুললেন নির্যাতিতা বিলকিস বানো নিজে। বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্তা বুধবার এক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন নিজের মক্কেলের হয়েছ। তাতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির জেরে বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিলকিসের আস্থা নড়ে গিয়েছে। বিলকিসের আবেদন, ‘আমাকে আতঙ্ক ছাড়া বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন।’
বিলকিস বানোর কথায়, ‘এই সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি আমার থেকে আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃখ এবং বিশ্বাস নড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার একার জন্য নয়, প্রতিটি মহিলার জন্য। যারা আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাঁদের সকলের বিষয় এটা।’ বিলকিস বানোর বিবৃতি টুইট করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। বিলকিস নিজের বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি এখনও অসাড়। আজ আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি- কোনও নারীর জন্য এভাবে বিচার শেষ হয় কীভাবে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর আস্থা রেখেছি। আমি সিস্টেমের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, এবং আমি ধীরে ধীরে আমার শোক নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম।’
আরও পড়ুন: মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বড় রায়, কী জানাল আদালত?
উল্লেখ্য, গত ১৫ অগস্ট বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার। ২০০২ সালের ঘটনায় মোট ১১ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি মুক্তি পায়। গোধরা কাণ্ডের পর বিলকিস বানোর পরিবারের ৭ জন সদস্যকে হত্যা এবং গর্ভবতী বিলকিসকে গণধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এই ১১ জন। এর জেরে যাবজ্জীবন সাজা হয় তাদের। এই আবহে দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গোধরা কারাগার থেকে এই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের মার্চ মাসে দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছিল। গণধর্ষণ করা হয় বিলকিসকে৷ তাঁর পরিবারের ৭ জন সদস্যকে খুন করা হয়৷ পরিবারের অন্য ৬ জন সদস্য পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ পরে ২০০৪ সালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিশেষ সিবিআই আদালত বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের গণহত্যার অভিযোগে ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ জন অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ ঘোষণা করেছিল৷ তবে এই বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার পঞ্চমহলের কালেক্টর সুজল মায়াত্রার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দোষীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। সর্বসম্মতিক্রমে কারাবাসের সময় হ্রাসের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় কমিটিতে। সেই মতো সোমবার দোষীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।