৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ২৩ বছর। শুধু আমেরিকার জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা এটি। ২০০১ সালের সেই দিনে, নিউ ইয়র্ক শহরের, পেন্টাগন এবং পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিমান ভেঙে পড়ে, বিধ্বস্ত হয় টুইন টাওয়ার হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। প্রায় ৩,০০০ মানুষ মারা যান। পার্ল হারবার বোমা হামলার পর এটিই ছিল আমেরিকার মাটিতে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা, যা আমেরিকাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পথে টেনে নিয়ে গিয়েছিল।
যাঁরা এই মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ফটো জার্নালিস্ট বিল বিগগার্ট। তিনি সেই সময় চলমান বিশৃঙ্খলার এমনই একটি ছবি তুলেছিলেন, যা আজও স্মরণীয় হয়ে থেকে গিয়েছে। সেই দিন টাওয়ার টু ধ্বসে পড়ার সময়, নরকের সমান যে ভয়ানক পরিস্থিতি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল, তারই ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন বিগগার্ট। দুঃখজনকভাবে, এই ছবিটি ছিল তাঁর শেষ কাজ।
বলা বাহুল্য, বিগগার্ট ছিলেন একজন অভিজ্ঞ প্রেস ফটোগ্রাফার। নিজের দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বের নানান দ্বন্দ্ব এবং সামাজিক সমস্যাগুলি নিজের ক্যামেরায় ক্যাপচার করতে পছন্দ করতেন বিগগার্ট। তাঁর এই কাজ প্রায়ই তাঁকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলে দিত, আবার তিনি সাহসের সঙ্গে বেরিয়ে আসতেন। অবিচারের কঠোর সত্য সামনে তুলে ধরতেন। কিন্তু এদিন অর্থাৎ ৯/১১ হামলার দিনে আর শেষ রক্ষা হয়নি। ভয়ানক মুহূর্তের ছবিটি তুলে প্রাণটাকেই ত্যাগ করেন জার্নালিস্ট বিল বিগগার্ট।
ঠিক কী ঘটেছিল বিলের সঙ্গে
নিউ ইয়র্ক পোস্টের ফটোগ্রাফার বলিভার আরেলানোও একই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সহকর্মী বিল বিগগার্টকে ঘটনাস্থলেই দেখেছিলেন। বিগগার্ট-এর চলে যাওয়ার মুহূর্তটি স্মরণ করে, আরেলানো বলেছিলেন যে বিগগার্ট অন্যান্য ফটোগ্রাফারদের পিছনে ফেলে টাওয়ারের অনেক কাছাকাছি এগিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি তিনি দমকল কর্মীদের থেকেও বেশি সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর সকাল ১০:২৮:২২ মিনিটে, নর্থ টাওয়ারের নীচের সাপোর্ট বিমগুলি ভেঙে পড়ে। বিশাল বিল্ডিংটি ধসে পড়তে থাকে।
এরপর সকাল ১০:২৮:২৪ মিনিটে, বিল বিগগার্ট তাঁর জীবনের শেষ সেরা ছবিটি তুলেছিলেন। যে ছবিতে উত্তর টাওয়ারের পাশে দক্ষিণ টাওয়ারের ভেঙে পড়ার মুহূর্ত ফুটে ওঠে। দুঃসাহসিক এই ছবিটির রং ধূসর। ধুলো এবং ধোঁয়ায় জর্জরিত যেন নরকের একটি দৃশ্য।
ঝরে পড়ছিল ৫০০,০০০ টন কাচ, কংক্রিট এবং ইস্পাত। প্রতি ঘণ্টায় ১২০ মাইল বেগে মাটিতে আচার খাচ্ছিল তিল তিল করে তৈরি টুইন টাওয়ারের প্রতিটি অংশ। তার নীচেই দাঁড়িয়েছিলেন বিল। ক্যামেরার মধ্য দিয়েই হয়ত দেখেছেন নিজের মৃত্যুকেও।
আরও পড়ুন: (Air Pollution in India: ভারতের ৯৫ শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা কমেছে, তবে বিপদ এখনও কাটেনি! কী বলছে তথ্য)
এই ট্র্যাজেডির চার দিন পর, উদ্ধারকারী দল অবশেষে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংসস্তূপের নীচে বিগগার্টের মৃতদেহ খুঁজে পায়। তিনিই একমাত্র পেশাদার ফটোগ্রাফার, যিনি ৯/১১ কভার করতে গিয়ে, আত্মত্যাগ করে গিয়েছেন।
পেটাপিক্সেল জানিয়েছে যে হামলার সময়, বিল বিগগার্টের স্ত্রী তাঁকে তাঁর সেলফোনে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে এটি সন্ত্রাসবাদ, দুর্ঘটনা নয়। কিন্তু তখনও দায়িত্ববান বিগগার্ট শিরদাঁড়া সোজা রেখে বলেন, ‘আমি ভালো আছি। আমি দমকল কর্মীদের সঙ্গে আছি।’